কোরআনের বর্ণনায় সাহাবিদের মর্যাদা

যাঁরা ঈমানের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের সাহাবি বলা হয়। সাহাবিরা যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁরা সত্য ও ন্যায়ের মাপকাঠি। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি তাঁদের একনিষ্ঠ ভালোবাসা, ইসলামের জন্য ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ তাঁদের চির স্মরণীয় করেছে ইতিহাসের পাতায়। তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য তারকাতুল্য ও অনুসরণীয়।

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি : মুহাম্মদ ইবনে কাব আল কুরাজি (রহ.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, রাসুল (সা.)-এর সাহাবি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সবাই জান্নাতবাসী হবেন—যদিও দুনিয়াতে তাঁদের কারো দ্বারা ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকে। লোকটি জিজ্ঞেস করল, এ কথা আপনি কোথা থেকে বলছেন? তখন এই আয়াত পাঠ করলেন, ‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথমে ঈমান এনেছে এবং যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যানরাজি তৈরি করে রেখেছেন, যার তলদেশে নহর বহমান। তাতে সর্বদা থাকবে। এটাই মহা সাফল্য।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত :  ১০০; মাআরিফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৯১)

আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট : আল্লাহ রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবির জন্য যথেষ্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি এবং যেসব মুসলমান আপনার সঙ্গে রয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৬৪)

পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি : মহান আল্লাহ সাহাবিদের পরস্পরের অন্তরে প্রীতির সঞ্চার করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তাঁদের হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। তুমি যদি পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদও ব্যয় করতে, তাহলে তাঁদের হৃদয়ে এই সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতে না। কিন্তু তিনি তাঁদের অন্তরগুলো প্রতি সঞ্চার করেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৬৩)

মর্যাদায় তারতম্য : কোরআনে সাহাবিদের দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। তা হলো, এক. যাঁরা মক্কা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, দুই. এরপরে ইসলামগ্রহণ করেছেন। প্রথম শ্রেণির সাহাবিদের মর্যাদা তুলনামূল বেশি। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের আগে ব্যয় করেছে এবং জিহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বেশি তাদের অপেক্ষা, যারা (মক্কা বিজয়ের) পরে ব্যয় করেছে এবং জিহাদ করেছে।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ১০)

সাহাবিদের প্রশংসা : সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসায় কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সহচররা অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদের রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন।’ (সুরা ফাতাহ, আয়াত : ২৯)

পরস্পর মিত্রভাব : আল্লাহ তাআলা সাহাবিদের পরস্পরের মধ্যে মিত্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধরো; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কোরো, যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়েছ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

কল্যাণের নিশ্চয়তা : আল্লাহ তাআলা চার শর্তে সাহাবিদের সফলতার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এক. রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনা,  দুই. তাঁর শ্রদ্ধা ও সম্মান রাখা, তিন. তাঁকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা,  চার. কোরআন অনুযায়ী চলা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং যেসব মানুষ তাঁর (নবীর) ওপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে জ্যোতির অনুসরণ করেছে যা তার সঙ্গে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধু তারাই নিজেদের সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

মহান আল্লাহ সাহাবিদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ