শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪ | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কোরআনের বর্ণনায় সংলাপের গুরুত্ব

Paris
অক্টোবর ১৮, ২০২৪ ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

ইসলাম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রবর্তক। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর স্থানীয় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিপক্ষকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অধিকার দিয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সংলাপ ও আলোচনা।

ইসলাম পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে উৎসাহিত করে।

কোরআনের বর্ণনায় সংলাপের গুরুত্ব

পবিত্র কোরআনে একাধিক সংলাপের বর্ণনা এসেছে। যার কিছু সরাসরি ‘হিওয়ার’ (সংলাপের আরবি) শব্দে ব্যক্ত হয়েছে। কিছু সাধারণভাবেই বর্ণিত হয়েছে।
এসব বর্ণনা থেকে সংলাপ ও আলোচনার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। এমন কয়েকটি সংলাপ হলো—
১. সতর্ক করার মাধ্যম : সংলাপের মাধ্যমে ব্যক্তি অপরকে সতর্ক করার সুযোগ পায়। যেমন পবিত্র কোরআনে দুই বন্ধুর সংলাপ তুলে ধরে বলা হয়েছে—‘সংলাপরত অবস্থায় তার বন্ধু তাকে বলল, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি ও পরে শুক্র থেকে এবং তার পর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মনুষ্য আকৃতিতে?’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৩৭)

২. সংকট তুলে ধরার মাধ্যম : পারস্পরিক কথোপকথনের মাধ্যমে চলমান সমস্যা তুলে ধরা যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই শুনেছেন সে নারীর কথা যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সঙ্গে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর কাছেও ফরিয়াদ করেছে।

আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন (সংলাপ) শোনেন, আল্লাহ সর্বংশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ১)
৩. ভ্রান্তি দূর করার মাধ্যম : কোরআনের শুরুভাগে আল্লাহ ফেরেশতাদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের একটি বর্ণনা দিয়েছেন। যার মাধ্যমে তিনি ফেরেশতাদের ভুল ধারণা দূর করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি, তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্তুতিগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তা তোমরা জানো না।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৩০)

৪. দ্বিন প্রচারের মাধ্যম : সংলাপ দ্বিন প্রচারের মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে পাঠান, যেন তাঁরা তার কাছে দ্বিনের দাওয়াত পৌঁছে দেন। অতঃপর কোরআনে ফেরাউনের সঙ্গে তাঁদের সংলাপের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। যার মাধ্যমে তাঁরা আল্লাহর ঈমান ও দ্বিনের আহ্বান তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও, সে তো সীমা লঙ্ঘন করেছে। তোমরা তার সঙ্গে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে বা ভয় করবে।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ৪৩-৪৪)

৫. নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার মাধ্যম : সংলাপের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারে। যেমন নিজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে নুহ (আ.) সংলাপ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা বলেছিল, আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখছি। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোনো ভ্রান্তি নাই, বরং আমি তো জগত্গুলোর প্রতিপালকের রাসুল।’

(সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬০-৬১)

৬. সত্যকে বিজয়ী করার মাধ্যম : সংলাপের মাধ্যমে কখনো সত্যকে বিজয়ী করা যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন ইবরাহিম বলল, তিনি আমার প্রতিপালক, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান; সে বলল, আমিও জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহিম বলল, আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদয় করান, তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করাও তো। অতঃপর যে কুফরি করেছিল সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৫৮)

৭. অসত্যকে চ্যালেঞ্জ করার মাধ্যম : সংলাপের মাধ্যমে অসত্যকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি বলে, সে এটা নিজে রচনা করেছে? বলো, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তোমরা এটার অনুরূপ ১০টি স্বরচিত সুরা আনয়ন করো এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাকে পারো, ডেকে নাও।’

(সুরা : হুদ, আয়াত : ১৩)

সংলাপের শিষ্টাচার

প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, সংলাপের সময় কিছু শিষ্টাচার ও নিয়ম রক্ষা করা আবশ্যক। যেমন—

১. সংলাপকারীদের পরস্পরের সম্মান রক্ষা করা

২. প্রতিপক্ষের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনা

৩. প্রতিপক্ষের কথা খণ্ডনে তাড়াহুড়া না করা

৪. সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করা

৫. বিষয়ভিত্তিক কথা বলা, এলোমেলো কথা না বলা

৬. সত্য জানার জন্য সংলাপ করা

৭. মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়া

৮. আক্রমণাত্মক ভঙ্গি পরিহার করা

৯. যুক্তি ও দলিলনির্ভর কথা বলা

১০. সত্য মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা ইত্যাদি। (ওয়াসাইলুদ দাওয়াহ, পৃষ্ঠা-৯৮-৯৯)

যে সংলাপ পরিহারযোগ্য

ইসলাম কখনো কখনো ব্যক্তিকে সংলাপ ও বিতর্ক পরিহারের নির্দেশ দেয়। তাহলো—

১. জ্ঞান না থাকলে : সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যক্তির জ্ঞান না থাকলে সে সংলাপে যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্পর্কে বিতণ্ডা করে; তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথনির্দেশ, না আছে কোনো দীপ্তিমান কিতাব।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৮)

২. বিদ্বেষী মানুষের সঙ্গে : অন্তরে বিদ্বেষ রেখে সংলাপ কখনো ফলপ্রসূ হয় না। এমন সংলাপ পরিহার করা উত্তম। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের তোমাদের সঙ্গে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাদের কথামতো চল, তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৫)

৩. অসৎ ব্যক্তির পক্ষে সংলাপ : কোনো অসৎ ব্যক্তি ও দলের পক্ষ নিয়ে সংলাপ করা হলে তা পরিহার করা উত্তম। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের প্রতারিত করে তাদের পক্ষে বিতর্ক কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীদের পছন্দ করেন না।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৭)

৪. উদ্দেশ্য অসৎ হলে : অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো সংলাপের আহ্বান জানালে তা প্রত্যাখ্যান করাই উত্তম। আল্লাহ বলেন, ‘আমি কেবল সুসংবাদদাতা ও

সতর্ককারীরূপেই রাসুলদের পাঠিয়ে থাকি, কিন্তু অবিশ্বাসীরা মিথ্যা অবলম্বনে বিতর্ক করে, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য।’

(সুরা : কাহফ, আয়াত : ৫৬)

৫. সত্য উপেক্ষাকারীদের সঙ্গে : যারা সত্য জেনেও না জানার ভান করে এবং সত্য উপেক্ষা করে অসত্যের পক্ষ নেয়, তাদের সঙ্গে সংলাপ অর্থহীন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তোমার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়। মনে হচ্ছিল, তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে আর তারা যেন তা প্রত্যক্ষ করছে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬)

 

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ - ধর্ম