বাগমারার খাঁপুর দাখিল মাদরাসায়

কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য করতে গোপনে কমিটি গঠন; সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ 


বাগমারা প্রতিনিধি:

উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের খাঁপুর দাখিল মাদরাসায় প্রায় অর্ধকোটির বেশি টাকা নিয়োগ বানিজ্য সহ মাদরাসা ফান্ডের বিভিন্ন খাতের আয় মিলে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য গোপনে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগমারা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি তুলে ধরেন একই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ওসমান আলী সরদার।

নিয়োগ বানিজ্যের এই অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত বন্ধ করে মাদারাসা ফান্ডে জমা করে মাদাসার উন্নয়ন কাজে ব্যবহার সহ মাদরাসাটিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বৃহস্পতিবার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পরে বিকেলে বাগমারা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি তুলে ধরেন। এ নিয়ে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ও সচেতন মহলের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ইউএনও’র দপ্তরের অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলন সূত্রে জানা যায়, প্রাচীন ওই মাদরাসাটি এলাকার শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষার মানোন্নয়নে এলাকায় সুক্ষাতি অর্জন করেছিল। বিগত আট বছর পূর্বে মাদারাসাটিতে সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে নিয়োগ পান আব্দুল আজিজ। ওই পদে তার কাম্য যোগ্যতা না থাকায় তিনি অদ্যাবধি সহকারি শিক্ষকের স্কেলেই বেতন পেয়ে আসছেন। শিক্ষা স্তরের একটি দ্বিতীয় বিভাগ সহ সবগুলোতেই তৃতীয় বিভাগধারী আব্দুল আজিজ মাদরাসাটিতে সুপারেনটেনডেন্টের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই এর শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, শিক্ষার্থী কমে যাওয়া, মাদরাসা ফান্ডের বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাত, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও সহকর্মী সহ এলাকার লোকজনের সাথে কথায় কথায় দূব্যহার করা শুরু করেন।

সর্বশেষ তিনি মাদরাসাটিতে গোপনে ৪টি পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় আশি লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করার জন্য ওই এলাকার ভিজিএফ’র চাল ও মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা আত্মসাত মামলায় অভিযুক্ত ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান দুলাল, একই ইউপি’র সাবেক সদস্য আব্দুর জব্বার ও বর্তমান সদস্য লুৎফর রহমান দুলালকে কোন মিটিং সভা ও নির্বাচন না করে গোপনে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য করে নেন। এতে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এলাকাবাসী নিয়োগ বানিজ্যের এই অবৈধ কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারের নেতৃত্বে দুলালের অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী তাদেরকে প্রাণনাশের ও এলাকাছাড়ার হুমকি দেয়। পরে তারা নিরুপায় হয়ে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হন।

ইউপি’র সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হাসিনা বেগম বলেন, মাদরাসার সুপার এবার দুলালের খপ্পরে পড়েছে। ইউনিয়নে একজন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, নারী নির্যাতনকারী, ভিজিএফ ও মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা আত্মসাত ও ইউনিয়নে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন ও অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ সহ বিভিন্ন অপরাধের হোতা এই দুলাল চেয়ারম্যান। এসব কারণে জনগন তাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। তাই এবার তিনি মাদরাসার নিয়োগের টাকা আত্মসাত করার জন্য মাদরাসার সুপারকে কুক্ষিগত করে নিয়োগ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী সরদার জানান, মাদরাসাটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ৪টি পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় আশি লক্ষ টাকা আত্মসাদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এলাকার সচেতন মহল এই অসৎ উদ্দেশ্যকে প্রতিহত করে নিয়োগের টাকা মাদরাসার উন্নয়নে ব্যয় করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান দুলালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার বলেন, ক্যাটাগরি অনুসারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি সেখানে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে আছি। এর বেশি তিনি কোন কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

বর্তমান ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কমিটি বিলুপ্ত অবস্থায় ছিল। পরে কমিটির করার জন্য বোর্ডের চিঠি আসে। সেখানে খুবই কম সময় থাকায় তড়িঘরি করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মাদাসার সুপারেনটেনডেন্ট আব্দুল আজিজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন গোপন কমিটি করা হয়নি। সরকারি নীতিমাল ও বিধিবিধান মোতাবেক কমিটি করা হয়েছে। নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা এমএম মাহমুদুল হাসান জানান, অভিযোগের বিষয়টি তার জানা নেই। এমন অভিযোগ হয়ে থাকলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সেখানে কোন অনিয়ম পেলে যথাযত আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এস/আই