কোটি ছাড়াল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, ট্রাম্প ব্যস্ত নির্বাচনে কারচুপি মামলায়

যুক্তরাষ্ট্রে কোটি ছাড়াল করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১০ দিনে ১০ লাখ আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাতে সে সংখ্যা ১০০ লাখে উঠলো। ফেব্রুয়ারি থেকে এ যাবত মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার আমেরিকানের। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা সামগ্রিক অবস্থার আলোকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। এ সতর্কবাণীর সাথে সঙ্গতি রেখে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যো বাইডেন সোমবারই এক প্রেস ব্রিফিংকালে সকলকে মাস্ক পরার আহবান জানিয়ে বলেছেন, এটি কোন রাজনৈতিক মতলবে নয়, নিজে বাঁচা, পরিবারের বাঁচা এবং প্রতিবেশী তথা সমাজের সকলের বাঁচার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। এটি শুধু ডেমক্র্যাট নয়, রিপাবলিকানও নয়, সকল আমেরিকানের প্রতি অনুরোধ। তাহলেও অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

এদিকে, ফাইজার ঘোষণা করেছে যে, তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের পরীক্ষার পর ৯০% সফলতা এসেছে। এর ফলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যেই হয়তো এফডিএ’র অনুমোদন পেয়ে তা জরুরিভাবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন যে, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবেন সকলেই।

করোনার প্রকোপ পুনরায় ব্যাপক আকার ধারণ করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের যে ধরনের উদ্যোগ-পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত তা একেবারেই অনুপস্থিত। সে স্থলে নির্বাচনে জনগণের রায় পেতে ব্যর্থতার গ্লানি প্রতিপক্ষের ভোট-কারচুপির ওপর চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আগের মতোই করোনা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দার পথেই অনড় রয়েছেন বলে সমালোচকরা মন্তব্য করছেন।

 

আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়াল, তবুও টনক নড়েনি ট্রাম্পের। অধিকন্তু তিনি ছুটছেন ল’ ফার্মে। ঘনিষ্ঠদের সাথে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন স্টেটে ভোট চুরি হয়েছে বলে মামলার চেষ্টা করছেন। চুরির সমর্থনে কোন প্রমাণ না থাকলেও ট্রাম্পের অনুগত এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন মামলাগুলো গ্রহণ করতে। ক্লিভল্যান্ডের বিখ্যাত ল’ ফার্ম জোন্স ডে নিয়েছেন মামলা পরিচালনার দায়িত্ব। সুপারভাইজ করছেন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি। বাইডেন যেসব স্টেটে বেশী ভোট পেয়েছেন সেগুলোতেই ভোট চুরির মামলার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাৎ যে কোন উপায়ে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে বিঘ্ন ঘটানোর প্রবল একটি চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন ট্রাম্পসহ রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক কর্মকর্তা।

তবে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ট্রাম্পের সেই ল’ ফার্মের কর্মকর্তারা শংকা প্রকাশ করেছেন প্রমাণহীন অভিযোগের মামলা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত এগুলো খারিজেরও আশংকা করেছে ল’ ফার্ম। তবে তারা মোটা অংকের ফি পাচ্ছেন বলে মামলায় অনীহা দেখাচ্ছে না। একই কারণে ট্রাম্পের নিযুক্ত কলম্বাসের আরেকটি ল’ ফার্ম ‘পোর্টার রীট মরিস এ্যান্ড আর্থার’র এক পার্টনার সোমবার পদত্যাগ করেছেন।

তার ধারণা, মামলায় জেতার কোনই সুযোগ নেই। শুধু বদনামের ভাগিদার হওয়ার চেয়ে সরে পড়াই উত্তম-মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে।

উল্লেখ্য, এই দুটি ফার্ম ইতিমধ্যেই পেনসিলভেনিয়ায় ভোট চুরির অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করেছে। সোমবার পেনসিলভেনিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেটের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে ইলেকশন কাউন্টি বোর্ডকেও। পুরো পেনসিলভেনিয়া স্টেটেই ভোট-কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে এই মামলায়। মামলা পরিচালনার জন্যে তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ সময় নির্বাচনের সময় ব্যয় হওয়া অর্থের সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে বলে রিপাবলিকান পার্টির চাঁদাদাতারা গণমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ্য, সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের সাথে সাথে দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে বাইডেনের গঠিত টিম যাতে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে না পারে সেজন্যে ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে নির্দেশ জারি করেছেন অর্থ প্রদান না করতে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশ করার আগে কোন অর্থ ছাড় না দেয়ার এ নির্দেশকে গণতন্ত্রমণা রিপাবলিকানরাও ভালো চোখে দেখছেন না। তবে ট্রাম্পের এহেন আচরণে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বাইডেন তার কাজ স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেই শুধু নয় আন্তর্জাতিকভাবেও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। করোনা রোধে যেমন টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। তেমনি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ফোন করেছেন এবং নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে সোমবার রাতে জানা গেছে। মানবতার সামগ্রিক কল্যাণ, বিশেষ করে করোনা প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রয়াসের অভিপ্রায়ে করণীয় নিয়ে বাইডেন বিশ্বনেতাদের সাথে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন