কেন মোদির ভরসা বিতর্কিত সাধু আদিত্যনাথে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিতর্কিত হিন্দু সাধু যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বের ওপর তার যে পূর্ণ আস্থা আছে এবং উত্তর প্রদেশের পরিবর্তনের জন্য তিনি যে আদিত্যনাথের ওপরই ভরসা রাখছেন -সে কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

 

রবিবার বিকেলে লখনৌতে যোগী আদিত্যনাথ যখন উত্তর প্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি দিল্লি থেকে এসেছিলেন।

 

পাশাপাশি তিনি টুইট করে ঘোষণা করেন, মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের নেতৃত্বেই ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ একদিন ‘উত্তম প্রদেশ’ হয়ে উঠবে।

 

হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ বলে পরিচিত আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করার পর থেকেই যে বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের অভিযোগ আনছেন, সম্ভবত তা থেকে দৃষ্টি সরাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদি আজ বারবার উল্লেখ করেছেন রাজ্যের উন্নয়নের কথা।

 

একের পর এক টুইট করে তিনি বলেন, “আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল উন্নয়ন। উত্তর প্রদেশের উন্নয়ন হলে তবেই গোটা ভারতের উন্নয়ন হবে।”

 

উত্তর প্রদেশের তরুণ সমাজের অগ্রগতি এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান বা অন্যান্য সুযোগ তৈরিতেও রাজ্যের নতুন সরকার কাজ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।

 

কিন্তু তার পরও ভারতের বেশির ভাগ বিরোধী দল ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে উত্তর প্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে হিন্দু-ভোট সুসংহত করতেই খুব সুপরিকল্পিতভাবে যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে আনা হয়েছে।

 

বস্তুত ভারতের সংখ্যালঘু বা মুসলিম ভোটের পরোয়া না করেও যে নির্বাচনে জেতা যায় – এবং বিপুল ব্যবধানে জেতা যায়, উত্তর প্রদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে বিজেপি সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে।

রাজ্যের ৪০৩টি আসনের একটিতেও বিজেপি বা তার শরিকরা কোনও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি, যদিও উত্তর প্রদেশে জনসংখ্যার ১৯ থেকে ২০ শতাংশই মুসলিম। তার পরেও তারা অনায়াসে জিতেছে সোয়া তিনশো আসনে।

 

এটা সম্ভব হয়েছে শুধু এই কারণেই যে বিজেপির তথাকথিত ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’-য়ের তত্ত্ব সফলভাবে প্রয়োগ করে তারা হিন্দুদের নানা জাত-পাতের ভোটকে ব্যালট বাক্সে নিজেদের দিকে টানতে পেরেছে।

 

ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, দুবছর বাদের সাধারণ নির্বাচনে এই হিন্দু ভোটের ‘কনসলিডেশন’ বা সুসংহত করার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতেই আদিত্যনাথকে উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগী আদিত্যনাথের নাম ঘোষণার পর থেকেই উত্তর প্রদেশের নানা জায়গায় স্বত:স্ফূর্ত উৎসব শুরু হয়ে গেছে, মূলত হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকজনেরাই পথে নেমে আনন্দোল্লাস শুরু করে দিয়েছেন।

 

আগামী দুবছরে আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি উত্তর প্রদেশে রামমন্দির নির্মাণের আন্দোলনকেও নতুন করে জিইয়ে তোলার চেষ্টা করবে বলে বিরোধী দলগুলো অনেকেই ধারণা করছেন – যদিও বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন।

 

আর সে কাজের জন্য গোরখনাথ মঠের প্রভাবশালী অধ্যক্ষ, টানা উনিশ বছর ধরে এমপি ও প্রকাশ্যে মুসলিম-বিরোধী কথাবার্তা বলার জন্য পরিচিত যোগী আদিত্যনাথের চেয়ে ভাল বাজি আর কে-ই বা হতে পারেন?

 

পাশাপাশি এ কথাও মনে রাখতে হবে, দিল্লিতে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি যে লোকসভায় একক গরিষ্ঠতা ভোগ করছেন তার মূলে আছে ২০১৪ সালে উত্তর প্রদেশে বিজেপির একচ্ছত্র জয়।

 

২০১৯-এ দেশের ক্ষমতায় ফিরতে হলেও নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপি-র উত্তর প্রদেশে এক ইঞ্চি জমিও হারানো চলবে না – আর সেই দায়িত্ব নিয়েই নবাবি শহর লখনৌর মসনদে এসেছেন এক গেরুয়াধারী হিন্দু সাধু!

সূত্র: বিবিসি বাংলা