কেন কাবুল দখলের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে সায়গন পতনের?

দীর্ঘ ২০ বছর আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন তালেবান। কাবুল অভিমুখে তালেবানের অগ্রাভিযান টের পেয়েই রাজধানী কাবুলের মার্কিন দূতাবাস থেকে নিজেদের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয় আমেরিকা।

রবিবার তালেবান কাবুল দখলে নেওয়ার পর আমেরিকান হেলিকপ্টারে করে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবিটি কারও কারও কাছে পরিচিত।

১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর সায়গনের একটি ছাদে লোকজন ঠেলাঠেলি করে হেলিকপ্টারে উঠছিলেন। ফটোগ্রাফার হালবার্ট ভ্যান সেই ছবিটি তোলেন।

 

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দলের বিশ্লেষক ও আইন প্রণেতারা কাবুলে তালেবানের ক্ষমতা দখলকে সায়গনের পুনরাবৃত্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

সায়গন পতন

ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকারের সঙ্গে দক্ষিণ ভিয়েতনাম ও তাদের প্রধান সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ।

এটি প্রায় ২০ বছর স্থায়ী ছিল। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বেশি ব্যয় হয়েছিল এবং এটি মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছিল। ভিয়েত কোং নামে পরিচিত ভিয়েতনামের পিপলস আর্মির কমিউনিস্ট সেনারা দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন দখল করে নেয়, যা পরবর্তীতে ‘সায়গন পতন’ নামে পরিচিত।

ভিয়েত কোং ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল সায়গন দখলে নেয়।

স্নায়ুযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য কমিউনিস্ট সহযোগীরা উত্তর ভিয়েতনামের পক্ষ নেয়, অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামকে কয়েক লাখ মার্কিন সেনাসহ পশ্চিমা সেনারা সহযোগিতা করে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং দুই বছর পর উত্তর ভিয়েতনামের সেনারা সায়গন দখলে নিলে দক্ষিণ ভিয়েতনাম আত্মসমর্পণ করে। পরে উত্তর ভিয়েতনামের নেতার নামে সায়গনের নাম হো চি মিন সিটি রাখা হয়।

কাবুলের মতোই সায়গন এত দ্রুত দখল করা হয়, যা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করতে পারেনি। পরে যুক্তরাষ্ট্র সায়গনে তাদের দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করে এবং হেলিকপ্টারে করে সাত হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক, দক্ষিণ ভিয়েতনামের নাগরিক এবং অন্যান্য বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেয়। এটি ‘অপারেশন ফ্রিকুয়েন্ট উইন্ড’ নামে পরিচিত।

এটা কি কাবুলের সঙ্গে একটি ন্যায়সঙ্গত তুলনা?

যুদ্ধ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম যুদ্ধ জনপ্রিয়তা হারায়। এই যুদ্ধে মার্কিনদের শুধু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারই খরচ হয়নি বরং ৫৮ হাজারের বেশি আমেরিকানের জীবন দিতে হয়েছিল।

সায়গন পতন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে কিছুটা প্রভাব ফেলে। তখন থেকে বিদেশে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়ে আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের অনিচ্ছা কাজ করে।

অনেক আমেরিকান আইন প্রণেতা সায়গন পতন ও কাবুলের মধ্যে সমান্তরাল রেখা টেনেছেন।

রিপাবলিকান হাউজ কনফারেন্সের সভাপতি এলিস স্টেফিনিক টুইট বার্তায় বলেন, ‘এটি জো বাইডেনের সায়গন।’

তিনি বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা, যা কখনো পূরণ হবে না।’

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফসের চেয়ারম্যান গেন মার্ক মিলে গত মাসেই এই তুলনা উড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দুটোর মধ্যে কোনও তুলনা দেখতে পাচ্ছি না। আমার ভুলও হতে পারে। কেউ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানে না। তবে, তালেবানরা ভিয়েতনাম আর্মির মতো নয়। এটি তেমন পরিস্থিতির মতোও নয়।’

প্রতীকী অর্থে দুটির মধ্যে প্রধান কিছু পার্থক্য আছে। ভিয়েতনাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের দুই বছর পর সায়গনের পতন হয়েছিল। আর কাবুলে আমেরিকানদের এমন সময় সরে যেতে হলো, যখন তারা আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

১৯৭৫ সালে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের পতন সীমিত ছিল। আমেরিকায় যুদ্ধ এখন জনপ্রিয় নয়। তবে, জো বাইডেন এই পতন কীভাবে নেবেন সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।

নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ফেলপস বলেন, ‘এটি যে বাইডেনকে আঘাত করবে তা নিয়ে আমার কিছুটা সন্দেহ আছে। এটিকে একটি পরাজয় এবং সম্ভবত একটি অসম্মান হিসেবে দেখা হতে পারে। সত্যি বলতে কী এটি তার আহ্বান ছিল।’

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন