কৃষি উন্নয়নে ইসলামের অনুপ্রেরণা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ইসলাম তার অনুসারীদের মানবিক উন্নয়নের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে দিকনির্দেশনা দেয়নি। সেই ধারাবাহিকতায় কৃষি ক্ষেত্রেও ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। কোরআন ও সুন্নাহের অনেক আয়াত ও হাদিসে কৃষি উন্নয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কৃষিবিমুখ হওয়ার কারণেই কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয়। কৃষি উন্নয়নে মুসলিমদের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে খাদ্যে স্বনির্ভর হওয়া যেত।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা যে বীজ বপন করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তাকে উৎপন্ন করো, না আমি উৎপন্নকারী? (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ৬৩)

এখানে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের খাদ্য উৎপাদনে কৃষিতে মনোযোগী হয়ে মহান রবের কুদরত অবলোকনের প্রতি আহ্বান করেছেন। কারণ কৃষক ক্ষেতে লাঙল চালিয়ে সার দিয়ে মাটি নরম করে মাত্র, যাতে দুর্বল অঙ্কুর মাটি ভেদ করে সহজেই গজিয়ে উঠতে পারে। মাটির স্তূপে পতিত বীজের মধ্য থেকে মহা-উপকারী বৃক্ষ কে তৈরি করল? জবাব একটাই—সেই পরম করুণাময় প্রভু, অপার শক্তিধর আল্লাহ তাআলার অত্যাশ্চর্য কারিগরিই এর প্রস্তুতকারক।

হাদিসেও জমি চাষাবাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যার কোনো জমি আছে সে যেন তাতে চাষাবাদ করে। অথবা অন্য ভাইকে তাতে চাষাবাদ করতে দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৯৩)

কৃষি কাজে পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। সেই পানি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তিনিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তারপর তা দ্বারা আমরা সব রকমের উদ্ভিদের চারা উদগত করি; অতঃপর তা থেকে সবুজ পাতা উদগত করি। যা থেকে আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি। …’ (সুরা : আনাম, আয়াত : ৯৯)

অন্য আয়াতে বলেন ‘আর যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩২)

সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনগণও কৃষি উন্নয়নে খুব মনোযোগী ছিলেন। উসমান (রা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি বৃদ্ধ বয়সে বৃক্ষরোপণ করছেন কেন? তিনি উত্তর দিলেন, সৎকর্মরত অবস্থায় আমার মৃত্যু হওয়া ফাসাদরত অবস্থা থেকে উত্তম। (নুজহাতুল আনাম, পৃ : ১৮৫)

যুগে যুগে মুসলিম খলিফাগণ কৃষি উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কৃষক ও চাষাবাদবান্ধব নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে খাল-বিল ও নালা খনন করে কৃষির অন্যতম উপাদান পানি প্রবাহ অবাধ করেছেন। কৃষক প্রজাদের আবেদনে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) ‘নহরে সাদ’ খননের প্রস্তুতি নেন। খননকাজ কিছুদূর এগোনোর পর বিশাল এক পাহাড় বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ (তার যুগে) আবার খননকাজ শুরু করেন। তিনি এবার দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দিলেন যে তোমরা দেখো খননকর্মীদের দৈনিক খাবারের মূল্য কত? যদি খাদ্যের ওজন একজন শ্রমিকের খননকৃত পাথরের ওজনের সমপরিমাণও হয় তবু তোমরা খননকাজ বন্ধ করবে না। (মুজামুল বুলদান : ৫/৩২১)।

অনেক খলিফা কৃষকের ফসল উৎপাদনের আগেই অগ্রিম আর্থিক অনুদান দিতেন। যেন তারা সহজে চাষাবাদ করতে পারে। যুদ্ধকালীন মুসলিম সেনাপতিগণ সৈন্যদের কঠোরভাবে নিষেধ করতেন যেন তারা কোনো ফসলি জমিন নষ্ট না করে। ক্ষেতখামারে অগ্নিসংযোগ না করে। একজন কৃষক যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাকে যেন আক্রমণ না করা হয়। (মুজামুল বুলদান : ২/২৭৪)

এমনই ছিল আমাদের পূর্বসূরিদের সোনালি ফসল উৎপাদনে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আজকের দিনে কৃষিকে নিম্নমানের পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই আসুন, আত্ম-অহমিকা পরিত্যাগ করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতগুলো কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদনে মনোযোগী হই। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। সূত্র: কালের কণ্ঠ