শনিবার , ১৫ জুন ২০২৪ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং শাখা-প্রশাখা

Paris
জুন ১৫, ২০২৪ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ

।। ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব ।।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর এমন একটি শাখা হয়ে উঠেছে যেখানে এমন সফটওয়ার তৈরি করতে হয় এবং মেশিন লার্নিংয়ের সঙ্গে কানেক্টেড করতে হয় যা মূলত বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করে থাকে। রোবটিক টেকনোলজিতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখন বিশদ অর্থাৎ যে কোনো মেশিনের বিশেষ করে রোবটের মানুষের মতো আচরণ করতে পারার ক্ষমতাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, মূলত কিছু সফটওয়ার তৈরি হয়েছে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদর্শন করার জন্য এবং অন্য কোনো মেশিনকে মানুষের মতো আচরণ করতে সাহায্য করার জন্য।

মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। লেকার বেনযাবিন ২০২৩ সালে বলেন যে, কম্পিউটারকে মিমিকস কগনেটিক এককে আনা হয় যাতে করে কম্পিউটার মানুষের মতো ভাবতে পারে। যেমন— শিক্ষা গ্রহণ এবং সমস্যার সমাধান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হলো মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি। কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, এআই ‘বুদ্ধিমান এজেন্ট’-এর অধ্যয়ন হিসেবে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে: যে কোনো যন্ত্র যা তার পরিবেশকে অনুধাবন করতে পারে এবং এমন কিছু পদক্ষেপ নেয় যা লক্ষ্য অর্জনে তার সাফল্যকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নেয়। যখন একটি মেশিন ‘জ্ঞানীয়’ ফাংশনগুলোকে কার্যকর করে যা অন্যান্য মানুষের মনের সঙ্গে মিল থাকে, যেমন— ‘শিক্ষা গ্রহণ’ এবং ‘সমস্যা সমাধানের’ সঙ্গে সংযুক্ত, তখন ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়। আন্দ্রেয়ার কাপলান এবং মাইকেল হেনলিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞায় বলেন ‘এটি একটি সিস্টেমের বহির্ভূত তথ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারার ক্ষমতা, এমন তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং ওই শিক্ষা ব্যবহার করে নমনীয় অভিযোজনের মাধ্যমে বিশেষ লক্ষ্য করা।

মেশিনগুলো যখন ক্রমবর্ধমানভাবে সক্ষম হয়ে উঠে তখন মানুষের সুবিধার জন্য বুদ্ধিমত্তাকে সংজ্ঞা থেকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপটিক্যাল অক্ষর স্বীকৃতিটি ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ উদাহরণ হিসেবে আর অনুভূত হয় না, তখন এটি একটি নিয়মিত প্রযুক্তি হয়ে ওঠে। বর্তমানে যে সক্ষমতাগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো মানুষের বক্তব্যকে সফলভাবে বুঝতে পারে, কৌশলগত গেম সিস্টেম যেমনÑ [দাবা খেলায় অংশগ্রহণ করার মতো উপলব্ধি এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করার মতো কাজ করতে পারে উচ্চতর স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চালাতে পারে] সামরিক সিমুলেশন এবং জটিল উপাত্তগুলো ব্যাখ্যা করতে পারে।

এআই গবেষণাকে কতগুলো উপশাখায় বিভক্ত করা যেতে পারে যা নির্দিষ্ট সমস্যা, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ সরঞ্জামের ব্যবহার বা নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলোর সেরা পারফরমেন্সের দিকে নজর দেয়। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঠিক কী করতে পারে, আর কী করতে পারে না! এই সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে গেলে আগে কয়েকটি বিষয়ে জেনে রাখা প্রয়োজন। কৃত্রিম মেধার কাজ করার জন্য লাখ লাখ তথ্যের রেকর্ড প্রয়োজন এবং প্রয়োজনীয় কম্পিউটার প্রসেসিং ক্ষমতাও লাগে। একাধিক তথ্যকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করে একটি নথি তৈরি করতে পারাকে বলা হয়ে থাকে বিগ ডেটা। এরপর, চ্যাটবট হলো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট একটি শাখা বলা যেতে পারে, যা প্রথাগতভাবে একটি এজেন্টের মতো কাজ করে। এটি প্রশ্নকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে যতটা সম্ভব নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া, চ্যাটজিপিটি ও একটি কৃত্রিম মেধার সংস্করণ যা অর্থপূর্ণ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের উপর নির্ভর করে তৈরি করা একটি ইন্টারফেস। এর নির্মাণকারী সংস্থা হলো ওপেনআই। বিপুল পরিমাণ তথ্য ব্যবহার করে কীভাবে ভাষাগত কাজ করে ফেলতে হবে তা শেখানো হয়েছে এই চ্যাটজিপিটিকে। এরপর রয়েছে, ক্লাউড রোবোটিকস যা ক্লাউড কম্পিউটিং, ক্লাউড স্টোরেজসহ নানা ধরনের ক্লাউড টেকনোলজি ব্যবহার করতে পারে এই বিশেষ রোবোটিকস। মানুষও চাইলে দূর নিয়ন্ত্রণের সাহায্যে এটি ব্যবহার করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা, আর্টিফিসিয়াল নিউট্রাল কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় এই ডিপ লার্নিং প্রসেস। এই পদ্ধতিতে কাজের মাধ্যমে কম্পিউটার এবং অন্য ডিভাইসগুলোকে শেখানো হয় কাজের ধারা, ঠিক যেমন মানুষ শেখে। এজ কম্পিউটিংয়ের কাজ হলো, অনেক বেশি তথ্য পাওয়া, ভুলের পরিমাণ কম করা ইত্যাদি কাজে সাহায্য করা। ডেভেলপার এবং এন্টারপ্রাইজগুলো রিয়েল টাইম ডেটা প্রসেসিং ব্যবহার করে কাজ করে। ভিডিও গেমের জন্য ব্যবহার করা হয় এই গেম এআই। নন-প্লেয়ার ক্যারেক্টারের ভেতর ঠিক মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা তৈরি করাই হলো গেম আই-এর কাজ। ওপেনএআই-এর সর্বশেষ সংযোজন হতে চলেছে জিপিটি ৪। জিপিটি মডেলের এটিই প্রথম মাল্টিমোডাল মডেল। অর্থাৎ এটি একই সঙ্গে ছবি ও টেক্সট ইনপুট নিতে পারে এবং তা থেকে টেক্সট আউটপুট দিতে পারে। লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম যা ব্যবহার করা হয় মানুষের ভাষা কোড বুঝার জন্য। এমনকি মানুষের আবেগের ব্যাখ্যাও করতে পারে। অপরদিকে, মেশিন লার্নিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম ভিত্তি বলা চলে। এই প্রক্রিয়ায় যে কোনো মেশিন, যেমন— চ্যাটবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো কিছু শিখে ফেলতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে বলা যায় যে, প্রাথমিকভাবে যদিও যুক্তি ও সমস্যাকেন্দ্রিক মেশিন লার্নিং প্রসেসিং শুরু করা হয়েছিল, তবে তার রূপ একটু একটু করে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেমন— জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব ধরনের প্রচুর কাজ সম্পন্ন হতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। যেমনÑ সাধারণ জ্ঞানের বিস্তৃতি হওয়া, শিক্ষা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার, পরিকল্পনা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা ইত্যাদি। ইদানীং আবেগের বহিঃপ্রকাশ নিয়ে বেশকিছু গবেষণা চলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ে যার কারণে কিছু মহলের বিজ্ঞানী বেশ উদ্বিগ্নও বটে। ভাবের আদান-প্রদানে পারদর্শী হলে, শেক্সপিয়ারান ওথেলোর মতো অবস্থা হবে কিনা মানবজাতির, সেটি পরের পর্বে আলোচনা করা যেতে পারে।

ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব : সহকারী অধ্যাপক, বিজনেস স্কুল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ - মতামত