কুলাউড়ায় শিক্ষা অফিসার আনোয়ারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের মধ্যে অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ স্বজনপ্রীতি প্রাধান্য পেয়েছে। চলতি বছরে পহেলা জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দিবসে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বই বহন খরচ বাবদ টাকা মাধ্যমিক স্কুলগুলোকে দেয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ।

এছাড়া জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ কুলাউড়া উপজেলা কমিটি সরকারি বিধি মোতাবেক ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করার কথা। কিন্তু সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিক্ষা অফিসার ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছেন। কমিটিতে পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহ্বায়ক, কুলাউড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে সদস্য, ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষকে সদস্য, আলী আমজদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষকে সদস্য, কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সদস্য, নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কো-অপ্ট সদস্য, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে কমিটি করা হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পদাধিকার বলে সদস্য করার কথা থাকলেও তাকে করা হয়েছে কো-অপ্ট সদস্য। উপজেলার মধ্যে সেরা ফলাফলের ভিত্তিতে একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করার কথা। কিন্তু সেখানে তিনি দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কমিটিতে সদস্য করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সাল ও চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দিবসে সরকার কর্তৃক উপজেলার ৩৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। বইগুলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত বহনবাবদ প্রত্যেক বছর একটি থোক বরাদ্দ আসে। কিন্তু উপজেলার সবকয়টি মাধ্যমিক স্কুল সেই বরাদ্ধ থেকে একটি টাকাও এখনো পাননি। সব টাকা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ছুড়ছেন মাধ্যমিক প্রধান শিক্ষকগণ।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৮ বছর থেকে সরকারি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করেই তিনি স্বীয় পদে কুলাউড়ায় কর্মরত রয়েছেন। সপ্তাহে অফিস করেন দুই থেকে তিনদিন। চাকরি করেন কুলাউড়ায় আর বসবাস করেন মৌলভীবাজারে। প্রতি সপ্তাহে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা দাপ্তরিক কাজের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আসেন। কিন্তু অফিসে এসে দেখতে পান শিক্ষা অফিসারের চেয়ার আছে, অফিসার নেই। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে কাজের সুবিধা নিতে আসা বিভিন্ন শিক্ষকদের নানা ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে কুলাউড়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অন্যান্য শিক্ষকরা তার এমন কর্মকাণ্ডে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। সবাই বলছেন, কোনো খুঁটির জোরে মো. আনোয়ার দীর্ঘদিন থেকে কুলাউড়ায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে কুলাউড়া সোনালী ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়। বরাদ্দকৃত টাকাগুলো সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবার কথা। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো বরাদ্দ আমরা পাইনি। যার ফলে আমরা বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা খরচ করে বইগুলো উপজেলা থেকে বিদ্যালয়ে বই বহন খরচ যোগান দেয়া হয়। আর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আমরা দাপ্তরিক কাজের জন্য গেলে শিক্ষা অফিসারকে পাই না।

এতে যেমন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি সাধারণ শিক্ষকগণও শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ারের বিভিন্ন নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন। তবে উপজেলায় বেশি সময় ধরে চাকরির সুবাদে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সঠিক নয়। দুই বছর আগে বই বহনবাবদ বিদ্যালয়ের নামে নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছে। সমগ্র উপজেলায় চলতি বছরে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। বরাদ্দকৃত অর্থ আমাদের ব্যবস্থাপনায় খরচ হয়ে গেছে। এর মধ্যে যতসামান্য কিছু অর্থ বিদ্যালয়ের জন্য রয়েছে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে আমার কোন কর্তৃত্ব নেই।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুল ওদুদ  বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ওই অর্থ বই বহনব্যবস্থাপনার খরচ বাদে অবশিষ্ট অর্থ বিদ্যালয়গুলোতে দেবার কথা, কেন দেয়া হয়নি সেটা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জিজ্ঞেস করবো। চলতি বছরের অভিযোগটি আমি খতিয়ে দেখবো।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবুল লাইছের কাছে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি  বলেন, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ কমিটি বাস্তবায়ন করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। নিয়মের মধ্যে দিয়ে কমিটি হবার কথা। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।