কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা: এ দায় কার?: রফিকুল ইসলাম

আমাদের দেশে রেলে প্রয়োজনীয় ব্যয় খুব কমই হয়। যা হয় তার সিংহভাগ হয় লুটপাট। ফলে যেখানে উন্নয়ন বা সংস্কার প্রয়োজন, সেখানে সে হারে কোনো কাজ হয় না। হলেও লুটপাটের কারণে প্রকৃত উপকারে আসে না। সম্প্রতি সিল্কসিটিনিউজে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে, রাজশাহীর কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। আবার পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে, চট্টগ্রামেরও নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েও সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে বা হয়েছে।  কিন্তু সংবাদ হলেও রেলের রাঘব বোয়ালরা ঠিকই থেকেছেন বহাল তবিয়তে। ফলে এখনো লুটপাট চলছেই রুপপুরের বালিশ কেনার মতো।

এ কথাগুলো লিখার উদ্দেশ্য হলো, গত রাতে ঘটে যাওয়া কুলাউড়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পেছনেও হয়তো এই প্রকৃত উন্নয়ন বা সংস্কারের নামে লুটপাটের ঘটনা আছে অন্তরালে। দেশে দুটি রেল বিভাগ রয়েছে। একটি পশ্চিমাঞ্চল ও আরেকটি পূর্বাঞ্চল। এই দুটি বিভাগেই ভয়াবহ দুর্নীতির ঘটনা ঘটে চলেছে উন্নয়নের নামে। কিন্তু রেলের সময়োপযোগী তেমন কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ছে না। ফলে মৌলভিবাজারের কুলাউড়ায় গত রাতে ঘটেছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। কিন্তু এর দায় কার?

সম্প্রতি আমি চীন সফর করে আসলাম। সেখানে একটি মেট্রো রেলও চলে ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে। হাজার হাজার মানুষ ট্রেনে চড়ছে। এসব ট্রেনে কোনো টিকিট কালেক্টর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও নাই। কিন্তু তার পরেও মানুষ নিজে নিজেই ডিজিটাল বুথ থেকে পাশ সংগ্রহ করে ট্রেনে যাতায়াত করছে। আবার দ্রুতগামী ট্রেন চলছে ঘন্টায় ২০০-৩৫০ কিলোমিটার বেগে। সেখানেই টিকিট নিয়ে কোনো ঝামেলা নাই। হয় অনলাইনে, নয়তো কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে যাত্রীরা ট্রেনে উঠছেন। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীই ট্রেনেই উঠার বা স্টেশন পান হওয়ার সুযোগ নাই চীনে। কারণ গোটা চীনের রেল স্টেশনগুলোতে প্রবেশ ও বাহিরের পথে রয়েছে ডিজিটাল চেকপোস্ট। টিকিট বা ট্রেনের পাশ ডিজিটাল চেকপোস্টে পাঞ্চ না করা পর্যন্ত কেউ ঢুকতেও পারবে না, আবার কেউ বের হতেও পারবে না। ফলে ট্রেনের ভিতরে টিকিট নিয়ে কোনো বালাই নাই। কেউ টিকিট চেকও করে না কোথাও।

আবার শত শত কিলোমিটার ট্রেন লাইনগুলোও দেখতে ঝকঝকে, চকচকে। ফলে ট্রেন চলার সময় যেন মশৃনগতিতে চলে। এতে করে ট্রেন চলছে বুঝাই যায় না। কিন্তু আমাদের দেশের ট্রেনে চড়ার পরে মনে হয় এই বুঝি উল্টে যাবে ট্রেন। উল্টে যাচ্ছেও হর হামেশাই। আবার কোনো রেলসেতুগুলোর দশা দেখলে মনে হয়, এগুলো কোন মান্ধাতার আমলে তৈরী। বাংলাদেশের রেললাইন ও রেলসেতু সংস্কারের নামে যে টাকা ব্যয় হয়, তাতে বছরে অনন্তত নতুন করে ১০০ কিলোমিটার রেললাইন করা যাবে। কিন্তু সংস্কারের নামেই চলে যত লুটপাট। এ কারণেই হয়তো কুলাউড়ার কালভার্টটি হয়ে পড়েছিলো ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে রবিবার রাতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় আমজনতার চারটি প্রাণ গেলো নিমিশেই। আহত বহু। এর জন্য দায়ী কে? সেই দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি হতাহতদের বিপুল অংকের ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক।

লেখক: সাংবাদিক

দৈনিক কালের কণ্ঠ

রাজশাহী ব্যুরো প্রধান