কাশ্মীরে কোনও নজর নেই, স্পষ্টতই জানিয়ে দিল তালেবান

প্রায় দুই দশক পর ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে তালেবান। রবিবার (১৫ আগস্ট) প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসসহ রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পশ্চিমা সমর্থিত আশরাফ গনির সরকারকে উৎখাত করেছে তারা। এরপর মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এতে তালেবানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তাদের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।

তিনি জানিয়েছেন, ‘আফগানিস্তানে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তালেবান। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে চাই যে কেউ আমাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’

আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে কাউকে সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তান যাতে একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র বা সংঘাতের দেশ না হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে, তাদের সবাইকে আমরা ক্ষমা করেছি। আমরা শত্রুতার অবসান চাই। আমরা ঘরে ও বাইরে কোথাও কোনো শত্রু চাই না। কাবুলে আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।

তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনো সমস্যায় জড়াতে চাই না। ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী কাজ করার অধিকার আমাদের আছে। অন্যান্য দেশেরও বিভিন্ন পন্থা, নিয়ম এবং বিধান রয়েছে। তেমনই আমাদের মূল্যবোধ অনুযায়ী নিজস্ব আইন-কানুন মানার অধিকার আফগানদের আছে।

কাশ্মীর নিয়ে তালেবানের মাথাব্যথা নেই জানিয়ে জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাশ্মীরে আমাদের কোনও নজর নেই। আমরা এখন কারও সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি করতে চাই না’ স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে জবিউল্লাহ ‘দু’পক্ষ’ বলে ভারত এবং পাকিস্তানকেই বোঝাতে চেয়েছেন।

যদিও মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের জমানায় একাধিক বার কাশ্মীরে সক্রিয় পাক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তালেবান। এমনকি, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় বিমান ছিনতাইকারী জঙ্গিদেরও আশ্রয় দিয়েছিল তারা। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলেরও সমালোচনা করেছিল তালেবান।

২০ বছর আগের তালেবানের সঙ্গে বর্তমান তালেবানের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘২০ বছরের সংগ্রামের পর আমরা (দেশকে) মুক্ত করেছি এবং বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি। গোটা জাতির জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত।’

তিনি বলেন, বিশ বছর আগেও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। আজও আছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা, পরিপক্কতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে বিশ বছর আগের তালেবানের সঙ্গে আজকের তালেবানের বিশাল তফাত রয়েছে। আমরা এখন যেসব পদক্ষেপ নেব তার সাথে সেসময়কার তফাত রয়েছে। এটা বিবর্তনের ফসল।

প্রায় আড়াই দশক পর ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করা তালেবান এবার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষায় বেশ সচেতন বলেই জাবিউল্লাহর মন্তব্যে স্পষ্ট। এবার আর আফগানিস্তানকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর’ তকমা দিতে রাজি নয় তালেবান।

অতীতে লস্কর-ই-তইবা, লস্কর-ই-জঙ্গভি, জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীকে কাশ্মীরের নাশকতার জন্য প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র-সাহায্যের অভিযোগ উঠেছে তালেবানের বিরুদ্ধে। চলতি মাসেও কয়েকটি পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, লস্কর জঙ্গিরা তালেবান অধিকৃত এলাকায় শিবির খুলেছে। তালেবানের তৈরি চেকপোস্টগুলোতেও কাজ করছে তারা। এই পরিস্থিতিতে তালেবান মুখপাত্রের ‘আশ্বাসবাণী’ ভারতকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ