কাশ্মীরে অভিযানে ধ্বংসস্তূপে বাড়িঘর, বন্দুকযুদ্ধে ২ জওয়ান নিহত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জম্মু ও কাশ্মীরের কুপরা জেলায় গত তিন ধরে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এতে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে একটি আধাসামরিক বাহিনীর দুই সদস্য নিহত হয়েছেন।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তবে কতজন বিদ্রোহীকে হত্যা কিংবা বাবাগুণ্ড গ্রামের আবাসিক এলাকাগুলোতে আত্মগোপনে রয়েছেন, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

গত রাতে কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি এবং অভিযান এখনও চলছে।

শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, গ্রামের ভেতর লুকিয়ে থাকা দুই বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সামনের দিকে এগোতে থাকলে ভেতর থেকে গুলি আসতে শুরু করে।

৬০ ঘণ্টার বন্দুকযুদ্ধে আধাসামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ ফোর্সের (সিআরপিএফ) দুই সদস্য নিহত হয়েছেন। এতে একজন কমান্ড্যান্ডসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

সূত্র জানায়, মৃত্যুর মতো পড়ে থাকা এক বিদ্রোহী একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বেরিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করা শুরু করেন। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা হকচকিয়ে যান।

বিদ্রোহীরা আত্মগোপনে আছে সন্দেহে গত তিন দিনে দুই থেকে তিনটি আবাসিক ভবন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের মুখে পড়ে স্থানীয় লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে গেছেন।

শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক বেসামরিক নাগরিক নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

কাশ্মীরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভারত জোরালো দাবি করে এলেও উপত্যকাটি আসলে একটি অধিকৃত অঞ্চল। ১৯৪৭ সাল থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে আছে।

হাতেগোনা কয়েকশ বিদ্রোহীর হাত থেকে রেহাই পেতে কাশ্মীরে সাত লাখের বেশি ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা আছে। প্রতিবেশী পাকিস্তান বিদ্রোহীদের ঠাঁই দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ভারতের।

এই বিশালসংখ্যক সেনাবাহিনী দিয়ে ভূস্বর্গের লোকজনকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যদিও ভারত এমন দাবি অস্বীকার করছে।

কাশ্মীরিরা স্বাধীনভাবেই থাকতে পছন্দ করেন। তবে তাদের কেউ কেউ পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়ার কথাও বলছেন।

ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সাল থেকে অহিংস আন্দোলন করে আসছে কাশ্মীরবাসী। কিন্তু ১৯৮৮ সাল থেকে সেখানে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহী শুরু হয়।

এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার কাশ্মীরি হত্যার শিকার হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও আট হাজার। গ্রেফতার, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বেশুমার।

২০০৮ সাল থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিয়মিতভাবে তাজা ও ছররা গুলি ছোড়ে আসছেন সেনারা। এভাবেই কাশ্মীরিরা এক ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে শুরু করেন। পুরো উপত্যকাটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভারতীয় রাষ্ট্রের সহিংসতার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনই নিন্দা করেনি। আর এভাবেই প্রদেশটিতে কাঠামোগত সহিংস পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সেখানে যা ঘটছে, তা মুছে ফেলা হচ্ছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় মর্মান্তিক হামলাটি ঘটেছে ভারতীয় সশস্ত্র সেনাদের বিরুদ্ধে। কোনো বেসামরিক লোক তাতে আক্রান্ত হননি। তারা টার্গেটও ছিলেন না। কিন্তু বেসামরিক কাশ্মীরি ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের আলাদা করে দেখে না ভারত।

বিক্ষোভকরীদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকাশ্য কর্মী হিসেবে বিবেচনা করে ভারতীয় জেনারেল ও রাজনীতিবিদরা। যে কারণে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ওপর যেভাবে আচরণ করা হচ্ছে, নিরপরাধ বিক্ষোভকারীদের ওপরও একই ধরনের আচরণ করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

কেবল গত তিন বছরে হাজার হাজার বেসামরিক কাশ্মীরি ও বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের বেলায় ভারত সবসময় আন্তর্জাতিক রীতিনীতি তাচ্ছিল্য করে আসছে।

বিক্ষোভকারীদের কোমরের ওপর টার্গেট করাসহ হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালানো হচ্ছে। এ ধরনের আচরণ যুদ্ধাপরাধের শামিল।

এ ছাড়া মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যেমন হচ্ছে- তেমন দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকরাও ভারতীয় বাহিনীর হামলা থেকে ছাড় পাচ্ছেন না। কাশ্মীরে বাকস্বাধীনতা ও অবাধ চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

ভারতীয় বাহিনী গত তিন দশক ধরে কাশ্মীরের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে।

কিন্তু কাশ্মীরি লোকজন কখনও ভারতীয় বেসামরিক লোকজন ও পর্যটকদের হামলা কিংবা তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করেননি।