কালাইয়ে সাব-রেজিষ্ট্রারকে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় দলিল অনুমোদন বন্ধ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাইয়ে সাব-রেজিষ্ট্রারকে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় দুই সন্তানের জননী এক অসহায় মহিলার দলিল অনুমোদন না করে বরং অফিসে লোকজনের উপস্থিতিতে তা ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সাব-রেজিষ্ট্রারের দাবী, ঘুষ নয়, মহিলার বয়স কম হওয়ায় তার দলিল অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কালাই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ওই ঘটনা ঘটেছে। ঘুষ ছাড়া কোন দলিল অনুমোদন হয় না বলে সাব-রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে এলাকার জমি ক্রেতা, বিক্রেতা, দলিল লেখক ও ভূক্তভুগিরা অভিযোগ তুলেছেন।

 
সাব-রেজিষ্ট্রার, দলিল লেখক, ও ভূক্তভুগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচগ্রামের রেজাউলের স্ত্রী কোমেলা বেগম (২৩) তার বাবার নিকট পাওয়া ৫ শতক জমি একই গ্রামের বুলু মন্ডলের নিকট বিক্রি করেন। সেই জমি দলিল করতে ক্রেতা ও বিক্রেতা গতকাল মঙ্গলবার সকালে কালাই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে উপস্থিত হন। সে অনুযায়ী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ছানোয়ার হোসেন ক্রেতা এবং বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরকারি ফি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দিয়ে পাঁচগ্রাম মৌজার আর.এস ৩৮৭২ নম্বর দাগের ০৫ শতাংশ জমির একটি কোবলা দলিল তৈরি করেন।

 
এরপর তিনি দলিল অনুমোদনের সময় জমির ক্রেতা বুলু মন্ডল ও বিক্রেতা কোমেলা বেগমকে সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট উপস্থিত করেন। এ সময় কালাই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিষ্ট্রার জাহিদুল হক ওই দলিল অনুমোদনের জন্য ৫ হাজার টাকা ঘুষ বাবদ দাবী করেন।

 
পরে তিনি দাবীকৃত টাকা না পাওয়ায় ওই দলিল অনুমোদন না করে বরং অফিসে সকলের সামনে তা ছুড়ে ফেলে দেন। কোন কারণ ছাড়াই ঘুষের টাকার জন্য একজন সরকারি কর্মকর্তা দলিল অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়ায় বেকায়দায় পরেন জমি বিক্রেতা কোমেলা বেগম। পরে এ বিষয়ে জমি ক্রেতা, বিক্রেতা, দলিল লেখক মহরা সাব-রেজিষ্ট্রারের  সাথে দফায় দফায় বসলেও এর কোন সমাধান করতে পারেনি। দলিল অনুমোদন না হওয়ায় তাদের ফেরত যেতে হয়েছে বলে তারা জানান।

 
দলিল লেখক সমিতির মহরা ছানোয়ার হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে অনিয়ম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, এখন অনিয়ম যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। যেখানে ঘুষের জন্য একজন সাব-রেজিষ্ট্রার দলিল অনুমোদন বন্ধ করে দিতে পারে, সেখানে আর বলার কিছুই থাকে না।

 
জমি বিক্রেতা কোমেলা বেগম ও জমি ক্রেতা বুলু মন্ডল জানান, ঘুষের টাকা না দেওয়ায় দলিল করতে এসে আমাদের ফেরত যেতে হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে সাব-রেজিষ্ট্রার যে জড়িত তা বলার আর অবকাশ নেই। তাছাড়া অফিসে সকলের সামনে দলিল ছুড়ে দিয়ে আমাদের অপমান করা হয়েছে।

 
এ বিষয়ে কালাই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ঘুষের জন্য তার দলিল অনুমোদন করা হয়নি এমন অভিযোগ সত্য নয়, মহিলার বয়স কম হওয়ায় তার দলিল অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আবও বলেন, সংবাদটি প্রকাশ হলে আপনারা আমাকে একটি করে কপি দিবেন।

 
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, বিষয়টি আমিও জানি। তাছাড়া কোমেলা বেগম দুই সন্তানের জননী। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়সও ২৩ বৎসর। জমি বিক্রেতার বয়স কম হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সাব-রেজিষ্ট্রার নিজেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে দলিলটি অনুমোদন বন্ধ করে দিয়েছেন। আসলে বলতে গেলে কালাই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস দুনীতির আখঁড়ায় পরিনত হয়েছে। আগামী আইন-শৃঙ্খলা ও সমন্বয় মিটিংএ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স/শ