শুক্রবার , ১৬ জুলাই ২০২১ | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কান্নায় ভারি রামেক হাসপাতালের ফটক: করোনায় মৃত্যুতে রেকর্ড ছাড়ানোর শঙ্কা জুলাইয়ে

Paris
জুলাই ১৬, ২০২১ ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার ২০ মিনিট। হঠাৎ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে কান্নার রোল। কয়েকজন নারী-পুরুষ একটি ট্রলিতে করে চাদরে ঢাঁকা একটি লাশ নিয়ে হাসপাতালের ভিতর থেকে বের হচ্ছেন। আর সেই লাশ ঘিরেই কান্নার রোল পড়ে যায় স্বনদের মাঝে।

কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই মৃত রোগীর ছেলে হাসান আলী জানান, তাদের বাড়ি নওগাঁ সদর এলাকায়। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর বাবা মারা যান রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি নিয়ে ভর্তি ছিলেন হাসানের বাবা। কিন্তু করোনা পজেটিভ ছিলেন না। তবে অক্সিজেন দিতে হচ্ছিলো তাঁকে। তার পরেও বাঁচানো যায়নি। টানা ৬দিন চিকিৎসাধীন থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েন হাসানের বাবা আকবর আলী (৬৫)। আর বাবাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসান আলী।

এর কিছুক্ষণ পরে দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের প্রধান ফট আবারও কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে। এবার কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তারের লাশ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে আনার পরপরই কান্নায় ভেড়ে পড়েন তার স্বজনরা।

এভাবে মাঝে মধ্যেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে কান্নার রোল পড়ছে স্বজন হারানোর ব্যাথায়। কারণ চলতি মাসে এ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে প্রতিদিন গড়ে ১৭ জন করে রোগী করে মারা গেছেন গতকাল পর্যন্ত।

এর বাইরে সাধারণ ওয়ার্ডেও রোগী মারা যাচ্ছেন। ফলে প্রতিদিন ২০-২২ জন রোগী মারা যাওয়ার পরে সেসব লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রধান ফটক দিয়েই। আর তাতে করে রামেক হাসপাতালের এই প্রধান ফটকে যেন এখন অধিকাংশ সময়ই কান্নার রোলে ভারি হয়ে উঠছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য আনা হয় নাটোর সদর উপজেলার নূর নাহার বেগমকে। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভূগছেন। এ কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তাঁর স্বজনরা রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে নিয়ে আসার পরে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন স্বজনরা। শেষে প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা শেষে নূর নাহারকে নেওয়া হয় করোনা ওয়ার্ডে।

দুপুর দেড়টার দিকে করোনা আক্রান্ত রোগী মুন্তাজ আলীকে বের করে নিয়ে আসা হয়। তিনি অনেকটায় সুস্থবোধ করায় তাঁকে ছুটি দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। মুন্তাজ আলীকে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁরগ্রামের বাড়ি নিলফামারির সৈয়দপুরে। এর জন্য রামেক হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সিডিকেটদের দিতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা ভাড়া। অথচ নিলফামারির সৈয়দপুর যেতে একটি উন্নত অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া দিতে হবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা।

মুন্তাজ আলীর স্বজন মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে এ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সদস্যরা। আবার তাদের নিকট থেকে অ্যাম্বুলেন্স না নিলেও রোগী বের করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। ফলে বাধ্য হয় আমরা বেশি টাকা দিতে।’

এদিকে, রাজশাহী হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চলতি মাসে এখন গড় মুত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৭ জন। অথচ গত মাসে করোনা ওয়ার্ডে গড়ে এ হাসপাতালে মারা গেছে ১৩ জনের মতো।

রামেক হাসপাতালের দেওয়া তথ্য চিত্রে দেখা যায়, চলতি জুলাই মাসে এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মোট মারা গেছে ২৫৫ জন রোগী। যাদের মধ্যে আইসিইউতে মারা গেছে মাত্র ৩৪ জন। বাকি ২২১ জনই মারা গেছে করোনার সাধারণ ওয়ার্ডে। চলতি মাসে মারা যাওয়া ২৫৫ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ৬০ জন। আর বাকি ১৯৫ জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে এবং করোনামুক্ত হয়েও বেশ কয়েকজন মারা গেছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

এর আগে গত জুন মাসে রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসার্ধীন অবস্থায় করোনা ওয়ার্ডে মোট রোগী মারা যায় ৪০৫ জন। যার মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ১৯৮ জন। বাকিরা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।

রামেক হাসপাতালের দেওয়া তথ্য চিত্রে আরও দেখো যায়, এ হাসপাতালে মূলত গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে করোনা রোগী ভর্তি শুরু হয়। ওই মাসে মোট ২৫ জন রোগী ভর্তি হলেও কেউ মারা যায়নি। তবে পরের মাস মে থেকে করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে রোগী মৃত্যু শুরু হয়।

হাসপাতালের দেওয়া ওই তথ্য চিত্রে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু শুরু হয় এ হাসপাতালে। এর আগে এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি হলেও আক্রান্ত কেউ মারা যাননি। তবে উপসর্গ নিয়ে ওই চার মাসে মোট যান ১৫৩ জন। এর পর আগস্টে করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং উসর্গ নিয়ে মারা যান ৯৭ জন। যার মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ২৬ জন। এরপর সেপ্টেম্বরে মৃত মোট ৫০ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ১৩ জন, অক্টোবরে মৃত ২৮ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ৬ জন, নভেম্বরে মৃত ৩১ জনের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ৪ জন, ডিসেম্বরে মৃত ৩৪ জনের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ১১ জন, জানুয়ারিতে মৃত ২৯ জনের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে মৃত ১৭ জনের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ১ জন, মার্চে মৃত ৩১ জনের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ৩ জন, এপ্রিলে মৃত ৭৯ জনের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ৩৬ জন, মে’তে মৃত ১২৪ জনের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন ৫৩ জন, জুনে মৃত ৪০৫ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ১৮৯ জনে। সর্বেশেষ চলতি মাসে গত ১৫ দিনে মারা গেছেন ২৫৫ জন। সেই হিসেবে বলা যায়, চলতি জুলাই মাসে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুর হার অতিতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে হাসপাতালে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা একদিন কিছুটা কমছে, পরের দিন লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে হাসপাতালের করোনা ইউনিট জুড়ে রোগী ও স্বজনদের চাপে যেন ধাপ ফেলার যায়গাও থাকছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৪৫৪টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলো ৫০৭ জন। যা আগের দিন ছিলো ৫০০ জন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। রোগী ভর্তিও হচ্ছে অনেক। এতে করে একের পর এক ওয়ার্ড বাড়াতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এটি খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। রোগীর সেবা দিতে আগামীতে আরও করোনা ওয়ার্ড বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে বলেও জানান তিনি।

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর