হরদীপ হত্যাকাণ্ড

কানাডাকে ‘নিবিড় সহযোগিতা’ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা ও দেশটির নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা ও এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করতে দেশটিকে গোয়েন্দা পর্যায়ে ‘নিবিড় সহযোগিতা’ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডার সরকারের একটি সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।

‘এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা পর্যায়ে আমাদের নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করছে। দুই দেশের গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে,’ রয়টার্সকে জানিয়েছে কানাডীয় সরকারের সূত্র।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত এবং কানাডা— উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও অংশীদার। দুই কৌশলগত মিত্রের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হওয়া স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তা স্বীকারও করেছেন।

রয়টার্সকে এ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কানাডার সরকারের সঙ্গে আমরা নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আমাদের কানাডীয় সহকর্মীরা সম্প্রতি যে অভিযোগ এনেছেন, তাতে সত্যিই আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করছি, এ ব্যাপারে একটি পরিপূর্ণ ও মুক্ত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং এতে ভারতের সরকারেরও সহযোগিতা করা উচিত।’

তবে এই ইস্যুতে ভারতের সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতার আশা তেমনভাবে করছে না কানাডা। ট্রুডোর সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা রোনাল্ড প্যারিস বলেন, ‘বর্তমানে দুই দেশের যে সম্পর্ক, তাতে এই ইস্যুতে কানাডাকে সহায়তা করা ভারতের জন্য খুবই কঠিন হবে বলে আমার মনে হচ্ছে।’

কানাডায় বসবাসকারী শিখ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর ১৯৭৭ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর জেলা থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। পরে সেখানাকার নাগরিকত্বও অর্জন করেন তিনি।

একই সঙ্গে ভারতের একজন তালিকাভুক্ত ‘ফেরার’ সন্ত্রাসীও ছিলেন হরদীপ। শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠায় তৎপর দুই রাজনৈতিক সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস কানাডা শাখার নেতা ছিলেন তিনি।

খালিস্তান আন্দোলনকে বরাবরই বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করে আসছে ভারত। খালিস্তানপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠী খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফল জাস্টিস— উভয় সংগঠনকেই ভারতে নিষিদ্ধ।

কানাডায় এ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।

গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ। যে গুরুদুয়ারার সামনে নিহত হয়েছিলেন, সেটির পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক ভাষণে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

কানাডার সার্বভৌমত্বের জন্য জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

ট্রুডোর এই অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি অস্বীকার করেছে ভারত। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘কানডা সরকারের এই অভিযোগ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভারত বরারবরই আইনের শাসনে প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।’

প্রসঙ্গত, ভারতের পর কানাডায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিখ ধর্মাবলম্বী বসবাস করেন। সেই হিসেবে কানাডার শিখ কমিউনিটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। গত বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত অভিযোগ জানিয়ে আসছে যে কানাডার সরকার বিভিন্নভাবে খালিস্তান আন্দোলনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।

অন্যদিকে, ভারতের এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে কানাডার সরকার জানিয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেশটির সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি এবং ভারতের কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জন্য কানাডা নিজের সংবিধানের বাইরে যেতে অপারগ।

খালিস্তান ইস্যুতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরেই উত্তোরোত্তোর খারাপ হচ্ছিল। তার আঁচ পাওয়া গেছে চলতি মাসের জি২০ সম্মেলনেও। ওই সম্মেলনের অবসরে দুই দেশের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (বাণিজ্য মিশন) নিয়ে বৈঠকের সূচি ছিল দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে।

কিন্তু সেই বৈঠক হয়নি। উপরন্তু খালিস্তানপন্থীদের প্রতি উদারভাব পোষণের জন্য জাস্টিন ট্রুডোকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  তিরস্কার করেছেন বলে জানা গেছে।

১০ সেপ্টেম্বর শেষ হয় জি-২০ সম্মেলন। তারপর দেশে ফিরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মিশন স্থগিত করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তারপর ১৮ ডিসেম্বর হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে দায়ী করে পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন তিনি।