শিবগঞ্জে ‘৪০ কেজিতেই মণ’ নির্দেশ প্রশাসনের: আম কেনা বন্ধ রেখেছেন আড়ৎদাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বৃহত্তর কানসাট আমবাজারে আম বেচা-কেনা বন্ধ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় প্রশাসন ওজনে কারচুপি ও চাষিদের হয়রানী ঠেকাতে শিবগঞ্জ ও কানসাট এলাকায় ৪০ কেজিতে মণ করে আম কেনাবেচার নির্দেশ জারি করে। অনেক ব্যবসায়ী বিষয়টি জানতে না পেরে শতশত মন আম গাছ হতে ভেঙে কানসাট আম বাজারে আনে। শনিবার কানসাট বাজারে আম এনে অনেকে প্রশাসনের এমন নির্দেশ জানলেও আড়ৎদাররা আম না কেনায় দিনভর অপেক্ষা করেও আম বিক্রি করতে পারেননি আম বিক্রেতারা।

অবৈধ অস্ত্র ও মাদক প্রতিরোধে গত ৬ জুন অনুষ্ঠিত প্রশাসন ও স্টেকহোল্ডার নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কুলি সংগঠনের কুলি ছাড়া কোন আড়ৎদাররা অন্য কুলি দিয়ে লোড করতে পারবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আড়তদাররা জানান, এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কুলি সংগঠনের কুলিরা একটি ক্যারেট লোড করতে ৬ টাকা চাই, এতে খরচ বাড়ছে সবারই। এটি বন্ধের দাবিতে আড়তদাররা আম কেনা বেচা শনিবার সকাল থেকে বন্ধ রাখে বলে অনেকেই জানান।

তবে শিবগঞ্জ আম বাজারে আম বেচা-কেনা হলেও আড়তদার ও ব্যাপারীরা দাম কম দিয়ে আম কেনেন বলে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আড়তদার ও ব্যবসায়ী। শনিবার দুপুরে কানসাটের কয়েকজন আড়তদার ও তাদের লোকজন শিবগঞ্জ আম বাজার আড়তদারদের আম না কেনা বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে যান বলে শিবগঞ্জ আম আড়তদারদের কয়েকজন জানান। কানসাট আম আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৫/৪৬ কেজিতে এক মণ হিসেবে আম বিক্রি হয়। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, গোমস্তাপুরের রহনপুর ও ভোলাহাটে আগের নিয়মেই আম বেচা কেনা চললেও শিবগঞ্জ ও কানসাট বাজারে প্রশাসন এক মণ হিসেবে ৪০ কেজি করে আম কেনার নির্দেশনা জারি করে। ওমর ফারুক টিপু আরো জানান, শনিবার দুপুরে ইউএনও এর সাথে কথা বলেও কোন সুরাহা হয়নি। জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে তার সাক্ষাত মিলেনি।

রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কুলি সংগঠনের কুলি ছাড়া কোন আড়তদাররা অন্য কুলি দিয়ে এক ক্যারেট লোড করতে ৬ টাকা নেওয়ার ফলে সবাই ক্ষতির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এছাড়া প্রশাসনের ৪০ কেজিতে মণের নির্দেশনা মানতে না পারায় কানসাটের আড়তদাররা শনিবার ভোর হতে আম বেচা কেনা বন্ধ রাখে। তাদের দাবি, জেলার সব আম বাজারেই আম কেনাবেচা একই নিয়ম জারি করা হোক। কোথাও কম, কোথাও বেশী এটি হলে বা শিবগঞ্জ প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চললে আমাদের আম বাজার বন্ধের উপক্রম হবে। ব্যাপারীরা চলে যাবে ভোলাহাট ও গোমস্তাপুরসহ সাপাহার আম বাজারে এক মণে ৪০ কেজির স্থলে ৪৫-৫৪ কেজি হিসেবে পাবার কারণে।

ধোপপুকুর এলাকার আম ব্যবসয়ী আরমান শ্যামপুরের আম ব্যবসায়ী সাহেব আলী, শাহবাজপুরের রাইহান আলী বলেন, আমরা চলতি বছরে নগদে আম বিক্রি করতে পেরে আশায় বুক বেধেছিলাম। শনিবার কানসাট আম বাজারে আম নিয়ে এসে দেখি আম বেচা-কেনা বন্ধ রয়েছে। আম ব্যাপারী আসলাম মৃধা বলেন, ভোলাহাট অথবা রহনপুর এক মণে ৪৮-৫৪ কেজিতে এক মণ হিসেবে আম কিনছি আমরা। এখানে তেমন না হলে কিনবো কিভাবে।

এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ.জেড.এম নুরুল হক বলেন, জেলার সকল আম সংশ্লিষ্ঠদের নিয়ে এর আগে কয়েকটি সভায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই ৪০ কেজিতে মণ করে আম.কেনা-বেচার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তখন আড়তদারদের দাবি ছিল, জেলার সব আম বাজারেই যেন একই ওজনে আম কেনাবেচা হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সকল উপজেলাকে জানানো হয়েছে। কেউ যদি ৪০ কেজির উপরে মণ করে আম কিনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ৬ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে নিরাপদ আম উৎপাদন, সরবরাহ, বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ইউএনও চৌধুরী রওশন ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শিবগঞ্জ পৌর মেয়র কারিবুল হক রাজিন, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া, শিউলি বেগম, শিবগঞ্জ থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমানসহ অন্যরা। সভায় শিবগঞ্জ ও কানসাট আমবাজারের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং নিরাপদ আম উৎপাদনের পাশাপাশি যথাযথভাবে ব্যবসায়ীরা যাতে আম বাজারজাত করতে পারে সে লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান আম চাষি, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও বাগান মালিকরা। সভায় সিদ্ধান্ত হয়- রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কুলি সংগঠনের কুলি ছাড়া কোন আড়তদাররা অন্য কুলি দিয়ে লোড করতে পারবেনা। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক প্রতিরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মতবিনিময় সভায়। আড়তদাররা জানান- এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কুলি সংগঠনের কুলিরা একটি ক্যারেট লোড করতে ৬ টাকা চাই। এতে খরচ বাড়ছে সবারই। এটি বন্ধের দাবিতে আড়তদাররা শনিবার সকাল থেকে আম কেনাবেচা বন্ধ রাখে বলে অনেকেই জানান।

স/শা