কাটাখালির মেয়র আব্বাস ঢাকার হোটেল থেকে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তিকারী রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বুধবার ভোরে রাজধানীর ইশা খাঁ হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর ওই হোটেলে অভিযান চালানো হয়।

এর আগে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে তিনটি মামলা ছিলো।ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, আগে ২৪ নভেম্বর  বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে আব্বাসকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ কেন্দ্র করে কটূক্তি এবং সেটি নির্মাণের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেন নৌকা প্রতীকে দুবারের নির্বাচিত মেয়র আব্বাস আলী। এর পর তার ফাঁস হওয়া অডিও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত সোমবার রাত থেকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

তার এমন বক্তব্যে রাজশাহীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যদিও পুরো ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন মেয়র আব্বাস। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি মেয়র আব্বাসকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। ঢাকা থেকে তাকে রাজশাহীতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন পৌর মেয়র আব্বাস আলী। সোমবার রাতে লিটন নামে তার একান্ত সহকারিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয়। তার দেয়া তথ্যে মেয়র আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লিটনের মাধ্যমে মেয়র আব্বাস এলাকায় যোগাযোগ রক্ষা করছিল বলেও জানা গেছে।

গত ২২ নভেম্বর রাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোমিন নগরের বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। রাতেই সেই মামলা রেকর্ড করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

এর পর গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দেয়। প্রায় ২০ মিনিটের ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন এক বড় হুজুরের আপত্তির কারণে এসব মন্তব্য করেছিলেন।

গত ২১ নভেম্বর রাত থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে পৌর মেয়র আব্বাসের কটূক্তিমূলক বক্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, কাটাখালীতে সিটি গেটটি দ্রুত নির্মাণ হবে। তবে আমরা যে ফার্মকে কাজটি দিয়েছি, তারা গেটের ওপরে বঙ্গবন্ধুর যে ম্যুরাল বসানোর ডিজাইন দিয়েছে, সেটি ইসলামি দৃষ্টিতে সঠিক না। এটি করলে পাপ হবে। তাই আমি সেটিকে বাদ দিতে বলেছি।

এছাড়াও অপর একটি অডিওতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়েও অশালিন বক্তব্য দেয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলাসহ জেলা ও কাটাখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের পদ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগ।

এদিকে, বিতর্কিত এই মেয়রকে ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ওই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খোকনুজ্জামান মাসুদ। সোমবার রাতে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খোকনুজ্জামান মাসুদ পুরস্কার ঘোষণার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মেয়র আব্বাস বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে চরম অন্যায় করেছেন। এ জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। সে পৌর মেয়র হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অতিষ্ঠ পৌরবাসী।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির পর কাপুরুষের মতো গা ঢাকা দিয়েছেন মেয়র আব্বাস। তাই তাকে ধরার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছি।

স/আর