পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: প্রধান প্রকৌশলীকে শ্রমিক লীগের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কাজ না করেও দিনের পর দিন বসে থেকে বেতন নিয়ে কেউ ঠিকাদারী পেশায় আবার কেউ ব্যবসায়ী বনে যান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে তিন কর্মচারী। রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতাদের সহযোগিতায় তাঁরা এতোদিন ছিলেন ধরা-ছোয়ার বাইরে। এবার সেই তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রধান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন শ্রমিক লীগের নেতারা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের শ্রমিক লীগ শাখার সভাপতি মোতাহার হোসেন বুলু এবং সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল শনিবার দুপুরে প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীর কক্ষে গিয়ে তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসেন।
এ সময় শ্রমিক লীগের নেতারা আজ রবিবার সকালের মধ্যে ওই তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ প্রত্যাহার করা না হলে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর ঘেরাও করারও হুমকি দিয়েছেন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে ভবনে।

সূত্র মতে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কাঁকনহাটে নিরাপত্তা প্রহরীর আওতায় এএসএসএ পদে চাকরি করেন ওয়াহিদ মুন নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি মাসের পর মাস সেখানে না গিয়ে ভুয়া স্বাক্ষরের মাধ্যমে বেতন তুলে আসছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহীতে অবস্থান করে রেলওয়েতেই ঠিকাদারী করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী ওয়াহিদ মুনকে সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে বদলি করে দেন।

এদিকে ঈশ্বরদীতে ওয়েম্যান পদে কর্মরত শামীম নামের আরেক কর্মচারী নিজ কর্মস্থলে না গিয়ে মাসের পর মাস ধরে বেতন উত্তোলন করছেন। পাশাপাশি তিনি তাঁর মোটর গ্যারেজে রাত-দিন ব্যবসা করে আসছেন। এ বিষয়টিও জানাজানি হওয়ায় প্রধান প্রকৌশলী তাঁকে শাস্তিমূলকভাবে সিরাজগঞ্জে বদলি করেন।

এছাড়াও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতা রোকনুজ্জামানের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে স্বপন নামের ওয়েম্যান পদের আরেক কর্মচারীও কাজ না করে মাসের পর মাস ধরে বেতন উত্তোলন করায় তাঁকেও শাস্তিমূলকভাবে ঈশ^রদীতে বদলি করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের শ্রমিক লীগ শাখার সভাপতি মোতাহার হোসেন বুলু এবং সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হোসেনের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে যান।

এসময় তাঁরা প্রধান প্রকৌশলীকে ওই তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা প্রত্যাহারের দাবি জানান। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এতে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিক লীগের নেতারা প্রধান প্রকৌশলীকে দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। প্রধান প্রকৌশলী এর প্রতিবাদ জানালে শ্রমিক লীগের নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে আসেন। এসময় তারা আজ রবিবার সকালের মধ্যে ওই তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা না হলে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় ঘেরাও করার হুমকি দেন। এ নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে ভবনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী রমজান বলেন, রেলের উন্নয়নে সরকার বদ্ধ পরিকর। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে গত দুই বছরে। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনার কারণে যদি সেই উন্নয়ন কর্মকা- থমকে যায়, তাহলে এর দায়ভার আমাদেরকেই নিতে হবে। তাই কিছু অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় তাদের হয়ে শ্রমিক লীগের নেতারা এখন উঠে পড়ে লেগেছেন। এটি অন্যায়।’

স/শা