কাঁপছে রাজশাহী: শীতার্তদের পাশে দাঁড়াবে “শুভসংঘ”

অমিত হাসান

সারা দেশেই শীত জেঁকে বসেছে। আর কাঁপন ধরানো শীতের মাত্রা তুলনামূলক বেশি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। উত্তরের জেলায় শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দিনের বেলায়ও কুয়াশার রেশ কাটছেনা্। এর সঙ্গে উত্তর দিক থেকে আসছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস।

তীব্র শীতে কূয়াশায় ও কনকনে ঠান্ডায় হতদরিদ্র মানুষ শীতের কাপড়ের অভাবে কাঁতরাচ্ছে। এসব হতদরিদ্র শীতার্ত্ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধ মা বাবাকে নিয়ে শীতের কবলে পরে চরম বিপাকে পরেছে অনেকেই। সম্পূর্ণ ধনী মানূষের শীত নিবারণ করার জন্য লেপ ও কাঁথা গায়ে চাদর, কোম্বল এবং বিভিন্ন প্রকারের গরম কাপড়-চোপড় থাকলেও হতদরিদ্র মানুষের শীত নিবারণের জন্য কিছুই নেই।

তাই এসব স্বল্প আয় ও হতদরিদ্র মানুষের ভরসা যেন এখন আগুনের কুণ্ডলী। শীতের ছোবল থেকে বাঁচতে দিনরাত সব সময়ই তাঁরা আগুনের কাছে দাঁড়িয়ে নিজেদের রক্ষা করছেন। কিন্তু তাতেও কি রেহায় পাওয়া যায়?

এসব হতদরিদ্র মানুষদের পাশে এরই মধ্যে দাঁড়িয়েছেন সরকারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী কলেজর এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। হ্যাঁ বলছি দৈনিক কালের কন্ঠের পাঠক সংগঠন “শুভসংঘ”-এর রাজশাহী কলেজ শাখার কথা।

গরীব ও অসহায়দের সাহাযার্থে “শুভ সংঘ” রাজশাহী কলেজ শাখার শীত বস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।এখন অপেক্ষা বিতরণের। আজ সোমবার কলেজ চলাকালীন সময়ে শীত বস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচী শেষ হয়।

রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন স্থানে সর্বমোট ৭টি বুথ বসিয়ে শীত বস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই কর্মসূচীতে অংশ নেয় ‘শুভ সংঘ’র প্রায় ২৫ থেকে ৩০ তরুন-তরুনী। এসব আগামী ১০ জানুয়ারী দৈনিক কালের কণ্ঠের ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিতে শুভ সংঘ’র আয়োজনে শীতার্তদের মাঝে কম্বল ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে রাজশাহী কলেজের ছাত্র শিক্ষক প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এই কর্মসূচীতে অবদান রেখেছেন। তারা প্রত্যাকেই মনে করেন এ তীব্র শীতে এসব মানুষের পাশে থাকা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। “শুভসংঘ”র এমন একটি উদ্যোগ নেয়ায় কলেজর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের সাধুবাদ জানান।

‘শুভ সংঘ’র রাজশাহী কলেজ শাখা সভাপতি রাকিবুল হাসান সিল্কসিটি নিউজকে জানান, উত্তরাঞ্চলে প্রচন্ড শীত পড়ছে। এতে করে গরীব দুঃখিদের কষ্টের সীমা নেই। তাদের শীত নিবারনের জন্য শীত বস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে আমরা তাদের পাশে দাড়াতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আমাদের কলেজ কম্পাস থেকে শীত বস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। অর্থ্ দিয়ে আমরা কম্বল ক্রয় করব।পরে কম্বল ও সংগ্রহকৃত শীতবস্ত্র আমরা পরবর্তিতে গ্রুপ আকারে শীতার্তেদের কজে পৌছে দিব্।

শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে ইতোমধ্যে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ব্যপক অবদান রেখেছে। সকলেই তাদের নিজ নিজ স্থান থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করছেন বলেও তিনি জানান।

এই কর্মসূচীকে সমর্থন দিয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেছেন, ‘শুভ সংঘ’র কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে আমাদের কিছু চৌকষ ছেলে-মেয়ে দ্বারা। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমি অবশ্যই তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করব। আর এটা মূলত ‘শুভসংঘ’ এবং রাজশাহী কলেজের যৌথ প্রচেষ্টারই ফল।

এদিকে, আজ সোমবার অবস্থা এমনই হলো যে বাংলাদেশের ইতিহাসে শীত পড়ার সব রেকর্ড ভেঙে গেল। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে গত ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। দেশের উত্তরের শেষ প্রান্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে, রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আশরাফুল আলম জানান, রবিবার রাজশাহীতে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সোমবার সকালেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

‘মাঘ মাসে বাঘ কাঁপে’ প্রবাদও বদলে হয়ে যেতে পারে—‘পৌষ মাসেও বাঘ কাঁপে’। কারণ, আজ কেবল ২৫ পৌষ। এখনো পড়ে আছে পুরো মাঘ মাস।

স/অ