কলকাতায় শেখ মুজিবের ‘মূর্তি’ সরানোর আন্দোলনে ধীরে চলো নীতি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পশ্চিমবঙ্গের বেকার হস্টেল থেকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের ‘মূর্তি’ সরানোর জন্য বেধে দেয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে শুক্রবার। কিন্তু আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার তারা ‘ধীরে চলো’ নীতিতে চলবে।

সেখানকার ১৫টি মুসলমান সংগঠন ওই মূর্তিটি সরানোর জন্য যে ১৫ দিনের সময়সীমা দিয়েছিল তা আগামীকালই শেষ হচ্ছে।

কিন্তু বলা হচ্ছে, রাজ্যের কিছু এলাকায় এরিমধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় তারা আর হিন্দু-মুসলমান ভুল বোঝাবুঝি বাড়াতে চান না বলেই এখনই আর ওই দাবি নিয়ে এগোবেন না।

কলকাতার যে হস্টেলের তিনতলার ঘরটিতে শেখ মুজিব থাকতেন, সেখানেই একটি সংগ্রহশালায় তার একটি ভাস্কর্য রাখা হয়েছে।

মুসলমান সংগঠনগুলি বলে আসছিল, ওই হস্টেল চত্বরেই একটি মসজিদ আছে। তাই ধর্মীয় কারণে তার আশপাশে কোনও ‘মূর্তি’ রাখা যাবে না। তাই এটি সরিয়ে নিতে ১৫ দিনের সময় দিয়েছিল ওই সংগঠনগুলি। ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সংগঠনগুলির কর্মকর্তারা এক বৈঠকে বসেন।

বৈঠক শেষে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মূর্তি সরানোর দাবিতে যে আন্দোলন সারা বাংলায় শুরু হয়েছিল, তাতে ধীরে চলো নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৫টি সংগঠন”।

বিবিসি বাংলা, কলকাতা

মুসলিম সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বলছে, সম্প্রতি হিন্দুত্ব-বাদী কিছু সংগঠন অস্ত্র সহ মিছিল করার পর থেকে রাজ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সে অবস্থায় শেখ মুজিবের ‘মূর্তি’ সরানোর দাবিতে আরও এগোলে হিন্দু আর মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি আরও বাড়বে। সেজন্যই ওই আন্দোলনে আপাতত রাশ টানা হচ্ছে”।

“সম্প্রতি কয়েকটি সংগঠন অস্ত্র সহ রামনবমীর মিছিল করার পরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটাকেই সমাজের বড় সমস্যা বলে আমরা মনে করছি। আর শেখ মুজিবের মূর্তি সরানোর দাবিটা শুধু মুসলমানদের দাবি ছিল। সেটাও বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি তুলেছিলাম। আমাদের দেশ বা রাজ্যের কাছে না। এখনই এটা নিয়ে আর এগোতে গেলে ভুল বোঝাবুঝি আরও বাড়ত,” মন্তব্য কামরুজ্জামানের।

একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘মূর্তি’ সরানোর বিরোধিতা যারা করছিলেন, তাদের অনেকেই মনে করছিলেন যে’ এ নিয়ে আন্দোলন করলে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব পড়বে। তাদেরও যেমন বোঝানোর চেষ্টা করা হবে, তেমনই এই দাবিতে জনমত গঠনেরও প্রচেষ্টা চালাবে মুসলমান সংগঠনগুলি।

এদিকে শেখ মুজিবর রহমান যে কলেজে পড়তেন, (বর্তমান নাম মৌলানা আজাদ কলেজ) সেই ইসলামিয়া কলেজের মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ মূর্তি সরানোর বিরোধিতা করেছিলেন। বিরোধিতা করেছে মুসলমান সুশীল সমাজও।

প্রগতিশীল মুসলিম সমাজ নামের একটি মঞ্চ থেকে বুধবার এ নিয়ে একটি সম্মেলনও করা হয়।

ওই মঞ্চর আহ্বায়ক কাজি মাসুম আখতার বলছিলেন, “বঙ্গবন্ধুর মূর্তি সরানোর দাবী যারা করছে, তাদের নিজেদের ছবি আর কাট-আউট দিয়ে তো গোটা গ্রাম বাংলায় প্রচার চলে! সেটা ইসলাম-বিরোধী না তাহলে?”

বিবিসি বাংলা, কলকাতা

তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙ্গার ব্যাপারে তৎপরতা না দেখিয়ে ধর্মের নামে যে কুসংস্কার চলছে সেগুলো বন্ধ করতে যাক তারা; নিজেদের ভণ্ডামি বন্ধ করুক আগে”।

“ইসলামের নামে ধুয়ো তুলে নিজেদের যে ধর্ম ব্যবসা, সেটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা ছাড়া এটা কিছুই না। আর এই অপচেষ্টার বলি করতে চাইছে দুই বাংলা, বাঙালী জাতিসত্তাকে আর ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীকে,” বলছিলেন কাজি মাসুম আখতার।

বেকার হস্টেল থেকে শেখ মুজিবর রহমানের মূর্তি সরানোর দাবী ওঠার পরে সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক চলেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।

যদিও এই দাবীটি তোলা হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের কাছে, কারণ ওই মূর্তিটি স্থাপন এবং সংগ্রহশালার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস। তারা কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করে নি বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী শেখ মুজিবের মূর্তি সরানোর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন।

সূত্র: বিবিসি