কর্নেল পরিচয়ে প্রতারণা, অর্থ হাতিয়ে দোতলা বাড়ি!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সেনাবাহিনীর কর্নেল ও মেজর পরিচয়ে দুই ব্যক্তি প্রতারণা করে আসছিল দীর্ঘ দিন ধরে। চাকরি দেওয়ার নাম করে একে একে ১২ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় অর্ধ কোটির বেশি টাকা। মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় গ্রামে দোতলা বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে অবস্থান শনাক্তের পর কর্নেল পরিচয়ধারী মাসুদ পারভেজ ওরফে রানা ওরফে শাখাওয়াত (৪৬) ও তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম সুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (১৯ নভেম্বর) তাদের আদালতে সোপর্দ করার পর তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মহররম আলী জানান, গ্রেফতার হওয়া দুজন পেশাদার প্রতারক চক্রের সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক চক্রের মূল হোতা মাসুদ পারভেজ প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। সে প্রতারণা করে নেওয়া টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় দোতালা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিল। এরই মধ্যে সে একতলার কাজ শেষ করেছে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে সহযোগীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তির গত ১১ মে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) একটি নিয়োগ পরীক্ষার সময় মাসুদ পারভেজ ওরফে রানা ওরফে শাখাওয়াতের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেসময় মাসুদ পারভেজ নিজেকে সেনাবাহিনীর কর্নেল এবং সুমন মেজর পরিচয় দিয়ে ফারুকের সঙ্গে কথা বলে। এসময় মাসুদ পারভেজ বিআরটিএতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে। ওই চাকরি না হলে তাকে সচিবালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে চার লাখ টাকা নেয়। একই সঙ্গে প্রতারক চক্র ওমর ফারুকের কাছে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় দফায় দুই লাখ টাকা নেয়। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য বাকি টাকা চাকরি হওয়ার পর দিতে বলে। কিন্তু কয়েকদিন যেতেই আবারও চারজনের কাছ থেকে একসঙ্গে ১৬ লাখ টাকা নেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ পারভেজ জানায়, এটা তাদের প্রতারণার একটি কৌশল। পুরো টাকা একসঙ্গে চাইলে কোনও চাকরি প্রার্থী বিশ্বাস করতে চায় না। এজন্য নগদ হিসেবে এক লাখ বা দুই লাখ যা পাওয়া যায় তাই হাতিয়ে নেয় তারা। পরে আর টাকা না দিলে চাকরি হবে না এবং আগের দেওয়া টাকা ফেরত পাবে না— এমন ভয় দেখিয়ে আরও অর্থ আদায় করে।
প্রতারণার শিকার ওমর ফারুক জানান, সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে যাদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় তারা শারীরিক মাপ দেওয়ার সময় বাদ পড়ে। পরে মোবাইলে ভুয়া এসএমএস পাঠিয়ে তাদের ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা পাঠায়। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএইচে চাকরি প্রার্থীরা মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য আসলে মাসুদ পারভেজ জানায়, একজন চিকিৎসক মারা গেছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে।

ওমর ফারুক জানান, ওই ঘটনার পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে বলে জানিয়ে সিএমএইচ কর্তৃপক্ষের নামে আরেকটি এসএমএস পাঠায় মাসুদ পারভেজ। একই সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে মালি পদে পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে পাঁচ প্রার্থী জোগাড় করতে বলে। প্রথমে এক লাখ টাকা ও নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর বাকি চার লাখ টাকা করে দিতে বলে। ফারুক প্রথমে দুই লাখ টাকা দিলে দুটি নিয়োগপত্র দেয় মাসুদ পারভেজ। পরে আরও তিনজনকে তিনটি নিয়োগপত্র দিয়ে মোট ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। একই সঙ্গে সে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে নেয় ছয় লাখ টাকা।

ওমর ফারুক জানান, এত লোকজনের টাকা নিলেও কারো চাকরি হওয়ায় তিনি নিয়োগপত্র নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে যোগাযোগ করেন। এসময় ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ এসব ভুয়া নিয়োগপত্র জানালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, এই চক্রটি অন্তত ১২ জনের কাছ থেকে মোট ৫৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা টাকা হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল ফোন ও সিম বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। প্রতারণা করে নেওয়া অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারক চক্রের হোতা মাসুদ পারভেজের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার ছনকা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আব্দুর রউফ। সে একসময় সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট পদে চাকরি করতো। কিন্তু অসদাচরণ ও নারীঘটিত কেলেঙ্কারির কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর থেকেই সে প্রতারণামূলক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আর তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম সুমনের বাড়ি নোয়াখালী সদর থানার পূর্বএওজ বালিয়া এলাকায়। তার বাবার নাম আক্তার হোসেন।