করোনা প্রতিরোধে কঠোর নজরদারী গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসনের

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি:

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদেশ ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের কঠোর নজরদারীতে রেখেছে উপজেলা প্রসাশন। উপজেলায় করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। এবং করোন ভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য বাজার মনিটরিং করছেন প্রতিনিয়তই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা প্রসাশন সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহের চাইতে চলতি সপ্তাহে আরো বেশ কিছু বিদেশ ফেরত ব্যাক্তিরা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ইতি মধ্যে এর সংখ্যা প্রায় ১৫০ জনে ঠেকেছে। এর মধ্যে অনেকেই শুক্রবার জুমার নামাজে এবং বিভিন্ন বাজার ও চা-স্টলে ঘোরা ফেরা করতে থাকলে স্থানীয়রা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার আশংকা করেন। খবর পেয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম সরকার কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের খোঁজ খবর নিতে বাড়ী বাড়ী ছুটে যান। এবং বিদেশ থেকে আশা ব্যাক্তিদের বাড়ী চিহ্নত করে স্টিকার লাগানো ও সীল মারেন। এ সময় হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করার অনুরোধ করেন। এছাড়া আতংকিত না হয়ে ভাইরাস বিস্তার রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে লোকজনদের প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে কোয়ারেন্টাইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ারী দেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের কঠর নজরদারী করতে এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান,ইউপি সদস্য,গ্রাম পুলিশ কাজ করছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতল মিলে মোট ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবু তালেব।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম সরকার মরণঘাতী ভাইরাস নোবেল করোন (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে উপজেলা জুড়ে জনসচেতনায় কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত মানুষে দ্বারে দ্বারে গিয়ে তিনি সচেতনতার বাণী শুনাচ্ছেন। তিনি আজ শনিবার দিনব্যাপি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হোমকোয়ান্টাইনে থাকা প্রবাসীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ খবর রাখেন এবং সবাইকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। এছাড়াও নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ও এলাকায় সচেতনতা প্রচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। উপজেলা জুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিজেই মাইকিং এর মাধ্যমে সকলকে সচেতন হতে আহ্বান জানাচ্ছেন ইউএনও। কেউ কোন রকম গুজবে ছড়াবেন না, কান দিবেন না। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। হাত মেলানো, কোলাকুলি বিরত রাখুন। হাত ধুলে বার বার, ঝুঁকি কমে করোনার। সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর বিষয় গুলো তুলে ধরে এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে অবহিত করে তিনি বলেন, নিজে অথবা পরিবারের কেউ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে এমন আশঙ্কা দেখা দিলে সাথে সাথে হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনেন পক্ষথেকে বলা হয়।

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব বিস্তাররোধে সকল ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক, গণজমায়েত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, বিনোদন পার্ক বাড়ীতে শিক্ষক দ্বারা ব্যাচে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করাসহ সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। আরো বলেন, মানব জীবনে বেঁচে থাকতে হলে কঠিন সময় আসতেই পারে। কঠিন সময় বা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে, প্রথমে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হওয়া উচিত। বর্তমানে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারি আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশে ২০ জন ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত সারাদেশে একজন রোগী মারা গেলেও এ উপজেলায় বিদেশ থেকে আসা শতাধিক প্রবাসী হোমকোয়ান্টাইনে থাকলেও কারও শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। আসুন নিজে সচেতন থাকি অন্যকেও সচেতন করি এবং কঠিন সময়ে একে ওপরে পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।

স/অ