করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে আমেরিকায়

করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে দ্বিতীয় ঢেউ। ভেন্টিলেটর সংকট, এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরছে অ্যাম্বুলেন্স। ভেতরে তখন একটু অক্সিজেনের জন্য কাতরাচ্ছেন বছর ৩০-এর করোনা আক্রান্ত এক যুবক।

কিন্তু কানসাসের এই ছোট্ট শহরের কোনো হাসপাতালে একটিও শয্যা খালি নেই। লাকিনের কিয়ার্নি কাউন্টি হাসপাতালে যখন অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছল, তখন আর বাঁচার আশা নেই যুবকের। যথারীতি সেখানেও জায়গায় নেই। সব শুনে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলেন চিকিৎসক ড্রিউ মিলার। ওই যুবকের পূর্বপরিচিত।

তিনি অ্যাম্বুলেন্সেই যুবকের বুকে চাপ দিয়ে হৃদযন্ত্র চালু করার চেষ্টা করলেন। শেষচেষ্টা, যদি বাঁচানো যায়!

কিন্তু সেটুকুই। আর উপায় নেই। অ্যাম্বুলেন্সটিকে বাধ্য হয়েই রওনা করে দিলেন ডা. মিলার। ২৫ কিলোমিটার দূরে সদর হাসপাতাল। সেখানে একটি শয্যাই ছিল। অলৌকিকভাবে সেই যাত্রায় রক্ষা পান যুবক। কিন্তু সবার সেই ভাগ্য নেই। তাই রোজ হাজার হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

এক চিকিৎসকের আক্ষেপ, ‘আমরা ডুবে যাচ্ছি।’ গোটা যুক্তরাষ্ট্রেই একই চিত্র। কোভিড-১৯ ট্র্যাকিং প্রকল্প বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ৮৮ হাজার ৮০ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এটি এখন পর্যন্ত মহামারী পরবর্তী সময়ের রেকর্ড।

এতদিন বড় শহরে সীমাবদ্ধ ছিল সংক্রমণ। এবার গ্রামেও থাবা বসিয়েছে। বিশেষত দেশের মধ্যভাগে। বড় বড় শহরের সীমানা ছাড়িয়ে করোনা থাবা বসাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও। ফলে হাসপাতালগুলোতে আর তিলধারণের জায়গা নেই।

হন্যে হয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালগুলোতে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে কোভিড রোগীদের। আকাল চিকিৎসক, নার্সদেরও। যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়েস্টে ওহাইও এবং ডাকোটার মাঝে যেসব অঞ্চল রয়েছে, সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ওই সব অঞ্চলে প্রতিদিন দ্বিগুণেরও বেশি সংক্রমণ ধরা পড়ছে। জুনের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ওই অঞ্চলগুলোতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়েছে।

ইতোমধ্যে আমেরিকায় আড়াই লাখ মানুষ মারা গেছেন। আশঙ্কা অবশ্য আগেই করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তাদের ধারণা ছিল, শীতের এ সময়ে কোভিডের সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। আগে থেকেই বলেছিলেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই কয়েক মাস অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তাই সত্যি হল।

সমস্যা বাড়িয়েছে সাধারণ মানুষের অসাবধানতা। সেই সঙ্গে যথেষ্ট সতর্ক করছে না প্রশাসনও। নেব্রাস্কার গভর্নর জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে না। সাউথ ডাকোটার গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেননি। জমায়েতে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়নি।

৭০% মানুষ মাস্ক পরলেই করোনা ঠেকানো সম্ভব : এক বছর হতে চলল- গোটা বিশ্বে এখনও দাপট দেখিয়ে চলেছে করোনা। ভ্যাকসিন আসবে আসবে করছে। এই পরিস্থিতিতে গবেষণায় উঠে এলো ইতিবাচক তথ্য।

জানা গেছে, অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ যদি নিয়মিত নিয়ম মেনে মাস্ক ব্যবহার করেন, তবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে করোনার প্রকোপ। সম্প্রতি আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব ফিজিক্সের ফিজিক্স অব ফ্লুইডস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণার তথ্য।

সেখানে বিস্তারিত জানানো হয়েছে, মানুষ কী ধরনের মাস্ক পরলে এবং কতক্ষণ পরলে তা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে। গবেষণা দলের অন্যতম সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঞ্জয় কুমার জানান, ‘মহামারী রুখতে সার্জিক্যাল মাস্ক আদর্শ। এটি ৭০ শতাংশ কার্যকর।

তাই ৭০ শতাংশ মানুষও যদি ঘরের বাইরে বেরোলেই (রাস্তা, বাজার, অফিস) মাস্ক পরেন, তাহলেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হওয়া যাবে।’

 

সূত্রঃ যুগান্তর