করোনা ‘নিয়ন্ত্রণে’ না হওয়া পর্যন্ত খুলবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ রবিবার থেকে সীমিত পরিসরে খুলছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। একইভাবে চলবে গণপরিবহন। তবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে—১৫ জুনের পরই কি খুলে যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুন মাসেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই।

দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জীবন-জীবিকার তাগিদে হয়তো অনেক কিছুই সরকারকে খুলে দিতে হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেওয়া হবে না। করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। আর খোলাও হবে সবার শেষে।

অবশ্য গত এপ্রিলে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়বে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক আদেশে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসও খোলা রাখা যাবে না। তবে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা যাবে।

প্রায় আড়াই মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় বড় সংকটে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করতে পারছে না। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বাড়িভাড়াসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো প্রণোদনা দাবি করলেও তাদের জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। এই অবস্থায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যাপারে তৎপরতা শুরু হয়েছে।

শিক্ষাবিদরাও বলছেন, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্কুল খুলেছে। তবে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছে। স্কুলও জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর বাংলাদেশেও যাতে স্কুল খুলে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হবে। আর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসারও কমপক্ষে ১৫ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। স্কুল-কলেজ খুলতে দেরি হলেও প্রয়োজনে সিলেবাস কমিয়ে, অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করাসহ নানা উপায়ে ক্ষতি পোষাতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই আগেভাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। সূত্র: কালের কণ্ঠ