‘করোনা থেকে শিক্ষা’

এই মুহূর্তে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয়, সে বিষয়টির নাম কভিড -১৯। করোনাভাইরাস ডিজিজ- ২০১৯ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো কভিড -১৯। ভাইরাসটির আকার মাত্র ১২০ ন‍্যানোমিটার। এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে যে রোগ হচ্ছে, তার নাম কভিড-১৯। আমাদের কাছে করোনা নামেই বেশি পরিচিত। ২০১৯ এর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে চীনের উহানে আবির্ভাব ঘটে এই করোনাভাইরাসের। মধ্য ফেব্রুয়ারিতেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে করোনাভাইরাস। আমাদের বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় মার্চ মাসের ৮ তারিখে। আশ্চর্য হলেও সত্য এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি কোনো কার্যকরি ওষুধ বা টিকা। আমেরিকা, রাশিয়া, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশে টিকা আবিষ্কারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু ছাড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ। আমাদের বাংলাদেশের মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ছয় হাজারের উপর। করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ছিলো পুরোপুরি লকডাউন। কোথাও ছিল এক নাগাড়ে তিন থেকে চার মাস। জনজীবন ছিল একেবারেই  অচল।

এইরকম পরিস্থিতিতে করোনার এই ভয়বহতা আমাদের কি শিক্ষা দিল? সমাজ থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম? হ্যাঁ, আমার ধারণা, করোনা আমদের অনেক কিছু দেখিয়ে দিয়েছে, বুঝিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে সচেতন হতে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, করোনাভাইরাস তার রূপ পরিবর্তন করছে প্রতিনিয়ত, কিন্তু আমরা কি আমাদের পরিবর্তন করছি, পরিবর্তিত হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন সে শিক্ষা কি আমরা পেয়েছি। আমার মনে হয় আমাদের সময় এসেছে সব কিছু নতুন করে ভাবার, পরিকল্পনা করার। সময় কখনোই বসে থাকবে না। তাহলে কি শিক্ষা আমরা পেতে পারি চলুন এগুলোর ওপর একটু আলোকপাত করা যাক।

করোনার এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমাদের স্বাস্থ্য বা রোগ সচেতনতা বেড়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার, প্রথম প্রায়োরিটি এটাই হওয়া উচিত। নিজের শরীরের যত্ন না নিলে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। করোনা আমাদের মাঝে এই সচেতনতা তৈরি করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে অল্প সময়ে নিজেকে বডিবিল্ডার বানানো অসম্ভব কিন্তু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে সুন্দর ও সুস্থ্য থাকার চেষ্টা করা যেতেই পারে। শরীরকে এমন ভাবে তৈরি করা যেতে পারে যেন ভবিষ্যতে সে মনকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। ইন্টারেস্টিং খবর হলো আমাদের অনেকেরই ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে, যখন জানা গেলো যাদের ফুসফুসের সমস্যা আছে তাদের করোনা দ্রুত এফেক্ট করে তখন অনেকেই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে বা কমিয়ে দিয়েছে। কারণ আমরা জানি ধূমপানের কারণে ফুসফুস মারাত্মকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর করোনার নেতিবাচক প্রভাব ফুসফুসেই সব থেকে বেশি হয়।

করোনা আমাদের মধ্যে ইন্টার পারসোনাল রিলেশন বাড়িয়েছে, আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে একে অপরকে ভালোভাবে বুঝার, চেনার। করোনা আমাদের আরো বেশি করে সামাজিক করে তুলেছে। পারিবারিক ও সামাজিক ভালোবাসায় বন্ধন দৃঢ় হয়। বর্তমান টেকনোলজি আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে দূরে থেকেও কাছে থাকার। বিপদে বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায়। কথাটা বহুল প্রচলিত। পরিবারের প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা বেড়েছে। করোনা বয়স্কদের বেশি এফেক্ট করে আমরা বিভিন্নরকম আলোচনা আর পরিসংখ্যানে দেখেছি। আমরা আমাদের বয়স্ক বাবা-মা-আত্মীয়-স্বজনদেরকে সহজে এলাও করছি না বাড়ির বাইরে যেতে। আমরা আত্মীয়-স্বজনকে বলছি সচেতন থাকতে। এ করোনাকালে অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ সব বন্ধ থাকাতে সকলেই অল্প-বিস্তর অবসর সময় পেয়েছে, যেটা পরিবারের সঙ্গে কাটানোর একটা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। সেটা কতোটুকু কাজে লাগাতে পারলাম আমরা?

জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, গত পাচ ছয় মাসে পরিবেশে দূষণ মাত্রা কমেছে, কার্বন নিঃসরণ কম হচ্ছে, বায়ু দূষণের সূচক ছিল সর্বোচ্চ নীচে। আমরা দেখেছি পশু পাখির কলতান, আর সমুদ্রে ডলফিনের নিশ্চিন্তে সাঁতার কাটা। যা গত তিন দশকে দেখা যায়নি, অপরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থা, অধিক পরিমাণে টুরিস্ট, পরিবেশের মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে। কাজেই আমাদের এদিকে নজর দিতে হবে। প্লানেটকে আমাদের দরকার নেই, আমাদের দরকার প্লানেট, বুঝতে হবে এখনই। এটাকে বাঁচাতে হবে। আজকের শিশুকে তার নিরাপদ আবাস আমাদেরকেই তৈরি করে দিতে হবে। আমরা পরিবেশের যত্ন নেওয়া কি আদৌ শিখতে পরলাম?

করোনাকালীন সময়ের প্রথম তিন চার মাস খাবার দোকান বন্ধ ছিল, বাজারের সময় ছিল নিয়ন্ত্রিত, আমরা  কিন্তু এতেও চালিয়ে নিতে পেরেছি। করোনা আমাদের দেখিয়েছে কতটুকু কম খরচে চলা যায়, আর শপিংমলে যাওয়াটা কতটুকু জরুরি। অর্থাৎ আমরা আরো কম খরচেই চলতে পারি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও করোনা খরচের লাগাম টেনে ধরেছে। এখন আমরা বলা বা চিন্তা করা মাত্রই মার্কেট বা শপিং এ ছুটে যাচ্ছি না। দু-তিন বার ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। শুধু কি শপিং? অযথা ঘুরাঘুরিও কমে গেছে, কমে গেছে লং ট্যুর। কক্সবাজারের হোটেল সমূহসহ দেশের সব পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। আমরা কিন্তু তবুও স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে আছি।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় প্ল্যান থাকা বা অর্থের উৎস থাকা প্রয়োজন। করোনা লকডাউন এ অনেকের ব্যবসা বন্ধ ছিল তিন চার মাসেরও বেশি সময়। আবার অনেকে বেতন কম পেয়েছে। প্রতি দিনের খরচ কিন্তু থেমে ছিল না। বাজার খরচ, স্কুল ফি, চিকিৎসা খরচ, বাসা ভাড়া ইত্যাদি। নিজেকে চলতে হয়েছে, অনেকের সংসার চালাতে হয়েছে। আরেকটি চাকরি বা ব্যবসা থাকলে খরচ নিয়ে চিন্তা কম হত। শহরে চাকরির পাশাপাশি সম্ভব হলে নিজ গ্রামে প্রোডাকটিভ কিছু চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে, বলা যেতে পারে ব্যাক আপ প্ল্যান। এই বিষয়টা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে।

আমাদের সঞ্চয় থাকা উচিৎ, ইমারজেন্সি ফান্ড থাকা জরুরি। আমরা এই পরিস্থিতিতে যখন খরচ কমিয়ে দিচ্ছি ঠিক তখনি চিন্তা করতে পারি পারিবারিক কিছু সঞ্চয়ের। এ ধরনের প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনে এই সঞ্চয় এর দিকে আমারা নজর দিতে পারি। আবার যদি চাকরি চলেও যায়, তিন চার মাস চলার মতো ব্যবস্থা বা নতুন জবে ঢুকে বেতন পাওয়ার আগ পর্যন্ত যেন প্রয়োজনগুলো চালানো যেতে পারে। সেই বোধোদয় হয়তোবা সকলেরই অল্প-বিস্তর হয়েছে।

আমাদের মানসিকভাবেও শক্তিশালী হতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে করোনাকে জয় করার আরেকটি বড়ো হাতিয়ার হচ্ছে মানসিক শক্তি। ভেঙে পরলে চলবে না কোনোভাবেই। মনে সাহস রাখতে হবে। আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে ব্যপক, প্রিয়জনদের কথা ভাবতে হবে। এ সময়ে প্রিয়জনেরাই মনোবল বৃদ্ধি করে। নিজের শক্তি বা আস্থা বাড়ান। মানসিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিজের প্রতি অন্যের কাছে আরো আস্থা অর্জন করে ফেলুন। অনিয়ম, দূষণ আর নিজের প্রতি অযত্ন বিভিন্ন কারণে আমরা দিন দিন হয়ে পরছি শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল। এখনই সময় এসব বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার। নিয়মিত শারীরিক ব্যয়াম, যোগাসন, হাঁটাহাটি করে শরীরকে গড়ে তুলতে হবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।

করোনাকালীন সময়ে আমাদের ধর্মীয়  সচেতনতা বেড়েছে বহুগুণ। বাবা মা ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের বিদায়, করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল, চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও রোগীর সুস্থ না হওয়া, এসব কিছুই আমাদেরকে ধাবিত করেছে ধর্মীয় সচেতনতার দিকে। ধর্মীয় সচেতনতা আমাদেরকে শুধু আত্মার শান্তিই দেয় না, সাথে মানসিকভাবেও আমাদেরকে করে তুলে শক্তিশালী। ক্ষুদ্র এই জীবাণু আমাদের দেখিয়েছে সচেতন না হলে আমরা কতোটা অসহায় হতে পারি। এ করোনাকালে সবাই ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে একজন অপরের বিপদে এগিয়ে এসেছে। হেরেছে বিদ্বেষ, জয় হয়েছে মানবিকতার। এ শিক্ষা শুধু এরকম বিপদের মাঝেই যেন সীমাবদ্ধ থেকে না যায়।

আমরা এখন অনেকটা নিয়মের মধ্যেই চলে এসেছি। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে আমরা এখন অনেক সচেতন। যেমন নিয়মিত হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরে বের হওয়া, হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় নাক ও মুখ ঢেকে নেওয়া অথবা কনুই ব্যবহার করা। আমাদের ছোটো বেলা থেকেই শেখানো হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। কিন্তু তবুও যেন এই সুঅভ্যাসটা সবার মাঝে সঠিকভাবে ঠিক গড়ে উঠতে পারছিল না। এখন এই পরিস্থিতি যেন হঠাৎ করেই অনেকটা সচেতনতা বাড়িয়ে দিল। সকলেই এখন নিয়মিত হাত ধুচ্ছে। বাহিরে ধুলো, দূষণের মাত্রা এতো বেশি তারপরে ও আমরা মাস্ক ব্যবহারে করতাম আলসেমি। মাস্ক শুধু করোনাই নয়, রক্ষা করছে বায়ুবাহিত বিভিন্ন জীবাণু থেকেও। হাঁচি দেওয়ার সময় নাক ঢাকার সুঅভ্যাস আমাদের সহায় হচ্ছে বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ থেকে বেঁচে থাকতে। এ অভ্যাস আমাদের পরবর্তী জীবনে ও সর্বদা কাজে লাগবে।

এই করোনার ভয়াবহ সময়ে একটি শব্দ খুব বেশি করে শোনা যাচ্ছে, সেটা হলো ইমিউনিটি। করোনা থেকে বাঁচতে হলে বাড়াতে হবে শরীরের ইমিউনিটি শক্তিকে। সেটা বাড়ানোর জন্য শরীরকে দিতে হবে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য, যথোপযুক্ত ভিটামিন। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, মাছ মাংস খেতে হবে। সাথে শরীরেকে দিতে হবে প্রাকৃতিক ভিটামিনও। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। তবে শুধু ভিটিমিন-সি খেলেই অসুস্থ হবে না, এর কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ এখন নেই। বরং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের সাথে, নিয়মিত ভালো ঘুম দরকার। বিশেষ করে রাতের ঘুম। এটা প্রতিনিয়ত অভ্যাস করতে হবে।

কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে। এই করোনাকালে এইটা মনে হয় সকলেই প্রবলভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে কাকে বেশি প্রয়োজন। ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার কারা। অবশ্যই চিকিৎসকগণ, সেবা কর্মীরা। তাদের সন্মান করুন এবং স্বীকৃতি দিন। আমরা যেই দোকান থাকে খাবার কিনেছি, যে সাপ্লাই দিয়েছে, সার্ভিস সাপোর্ট যারা দিয়েছে, রাস্তার ঝাড়ুদারও সমানভাবে সাপোর্ট ও কাজ করে গেছে করোনাকালীন সময়ে। একবার ভেবে নেওয়া যায় তারা কাজ না করলে বা একমাস বন্ধ রাখলে কি পরিস্থিতি তৈরি হতো? বিভিন্ন অসুখ বিসুখ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদেরকে সমাজের বিভিন্ন ব্যাবস্থাপনার দুর্বলতা এবং করণীয় সম্পর্ক সজাগ করে দেয়। বংশ পরিচয়, চেহারা, অর্থ বা সম্পদ সব কিছু নয়। এগুলো আমাদেরকে কোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। সমাজের সকলেই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এটা অনুধাবন করার সময় এসে গেছে।

কয়েক যুগ ধরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও নানা আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ কমানোর অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব নেতৃত্বগণ এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ায় জন্য করা প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু সেটা যে অসম্ভব না, করোনা এসে তা বুঝিয়ে দিল। বিশ্বের উষ্ণতার হারও কমছে ধীরে ধীরে। গত কয়েক শতকে যে উষ্ণতা শুধু বেড়েই যাচ্ছিল। তিন মাসের মধ্যে বিশ্বের বায়ুর মান যত দ্রুত উন্নতি হয়েছে, হু হু করে কমছে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রা। বায়ুমণ্ডলে দূষণের পরিমাণ যতো দ্রুত কমল, তা সত্যি অভাবনীয়। এর কারণ মানুষ এখন স্বেচ্ছায় গৃহে নিজেকে বন্দী করে রেখেছে। প্রকৃতি যেন ধীরে ধীরে তার নিজস্ব ছন্দে ফিরে আসছে। পৃথিবী যেন নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে নিচ্ছে। আর আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে, পরিবেশ নিয়ে এখনই সচেতন হওয়ার জন্য।

এই করোনাকালীন সময়ে সব কিছুর সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থাতেও প্রচুর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। স্কুল কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য রয়েছে বন্ধ। কিন্তু এতো মন্দের মাঝে ও সুখের কথা এই যে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীরাও এখন প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিখছে। অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একেবারেই নতুন। বর্তমান সরকারের পক্ষ হতেও সার্বিক সাহায্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে যেন ছাত্র-ছাত্রীরা এই নতুন বিষয়টাকে সহজে গ্রহণ করে নিজেকে বিশ্বের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে পারে। সাময়িকভাবে হয়তোবা জিনিসটা সবার কাছে কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু কিছু দিনের মাঝেই এটা সবার পক্ষে সমাদরে গৃহীত হবে। কারণ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির দিকে। সময় এসেছে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাম্যাবস্থা অর্জনের। এখন যেকোনো প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মান সম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমান সরকারের দেওয়া  ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অনেকাংশেই পূরণ হচ্ছে।

এই করোনাকালে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই করোনাকে বলেছে বৈশ্বিক মহামারি। এই রোগ প্রতিহত করার জন্য পৃথিবীতে এখনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিডিয়াতেও প্রচার হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ আসছে। ওষুধ যেহেতু এখনো আবিষ্কার হয়নি কাজেই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে সামনের সময়গুলোতে।

চীনা সমর বিজ্ঞানী সান জু (Sun Tzu) তাঁর পৃথিবী-বিখ্যাত বই ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’-এ লিখেছিলেন, জয়লাভের জন্য শত্রুকে সঠিকভাবে জানা সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। এই যে করোনাভাইরাসের আকস্মিক আক্রমণ, আমরা আজও আমাদের এই ভয়াবহ শত্রুকে সম্পূর্ণ জানতে পারিনি। আজ দশ মাস পর এ দেশের নাগরিক হিসেবে এই গণশত্রু থেকে সামান্যতম শিক্ষা নিয়েও যদি আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিক-নির্দেশনামূলক সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হতে পারি সেটাতেই আমাদের সফলতা আসবে।

লেখক বিজিবিতে কর্মরত।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ