করোনা চিকিৎসায় পথ দেখাচ্ছে ভিআর প্রযুক্তি

বিনোদন জগতে ব্যাপক জনপ্রিয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) প্রযুক্তি এখন পথ দেখাচ্ছে করোনা চিকিৎসায়ও। কভিড-১৯ চিকিৎসায় বিশ্বজুড়ে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর মারাত্বক সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সংকট মোকাবেলায় অনভিজ্ঞ লোককেও এখন কাজে লাগানো হচ্ছে। ডাকা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষিত লোক থেকে শুরু করে অবসর প্রাপ্ত বা অন্যবিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা নার্সকে।

জানা যায়, কিছু হাসপাতাল ভারচুয়াল রিয়েলিটির সিমুলেশনের মাধ্যমে হাজারো ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সার্জারী, নিউরোলজিসহ অন্যান্য বিভাগের ডাক্তার, অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারদেরও এই উদ্যোগে যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারাও করোনা রোগীদের সেবা দিতে পারেন।

লস অ্যাঞ্জলসের সেডারস-সিনাই হসপিটালে ৩০০ এরও বেশি অন্য বিভাগের ডাক্তার ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে শিখেছেন কিভাবে রোগীর উপসর্গ যাচাই করতে হবে, কিভাবে প্রেটেক্টিভ গিয়ার পরিহিত অবস্থায় রোগীকে সিপিআর চিকিৎসা দিতে হবে। ওই হাসপাতালের বিভাগীয় পরিচালক রুসেল মেটক্যালফ-স্মিথ বলেন, ‘এটা এমন অনুভূতি, মনে হয় যেন আপনি রোগীর পাশে থেকেই তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এভাবে আমরা কভিড-১৯ চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এ প্রযুক্তির ফলে আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে প্রশিক্ষণ দিতে পারছি। এ সময়ে এটি খুবই কাজে দিচ্ছে।’

মূলত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোনো বাস্তব কিছু নয় বরং এটি হলো বাস্তবের মতোই চেতনা উদ্রেককারী কল্পনা। এটি কম্পিউটার এবং সিমুলেশন তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে কাজগুলো হয় ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরীর মাধ্যমে। ফলে একজন ব্যক্তি মনের কল্পনায় যা করতে চাইবেন বা যেখানে যেতে চাইবেন সেখানকার বাস্তব অনুভূতি পাবেন। এমনকি সেখানকার শব্দ, পরিবেশ, দৃশ্য, উত্তেজনা সব কিছুই ভুলিয়ে দেবে সত্যিকারে জগৎ থেকে। চিকিৎসায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে কল্পনার জগতে হাসপাতালের পরিবেশে রেখে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এতে বাস্তব না হলেও বাস্তব অনুভূতিই সে অর্জন করে।

আমেরিকায় হাসপাতালগুলোতে এখন ডাক্তার ও নার্সদেরও কভিড-১৯ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যেমন কিভাবে সঠিকভাবে তারা প্রেটেক্টিভ গিয়ার লাগাবে এবং খুলবে, ভেন্টিলেটর কিভাবে কাজে লাগাবে। সিপিআর এবং লাইফ সাপোর্ট বিষয়ে নতুন নির্দেশনা এবং রোগ নির্ণয় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। যেহেতু এ সময় মানব সম্পদের ঘাটতি রয়েছে তাই সেই ঘাটতি পূরণে কাজে লাগানো হচ্ছে ভিআর প্রযুক্তি।

স্টার্টআপ ভিরিটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. অ্যালেক্স ইয়ং বলেন, ‘আমরা মানুষদেরকে একেবারে বাস্তবিক পরিবেশে প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছি। প্রশিক্ষণার্থী মনে করছেন তিনি একটি আইসোলেশন কক্ষে রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখতে পাচ্ছেন তার কি অবস্থা। ডাক্তার ও নার্স আসছে তারা কি চিকিৎসা দিচ্ছে এবং রোগীর জন্যও পরিস্থিতিটি কেমন। এমন সব বিষয়ে অভিজ্ঞতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলসহ অনেক দেশেই ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে তাদের সফটওয়্যার কাজে লাগাচ্ছে।

নিউ ইয়র্কে ইউনিভার্সিটি ল্যাংগোনে মেডিক্যাল সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক ডা. ক্যারোল ডার সারকিসিয়ান বলেন, ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা দারুণ ফলাফল পেয়েছি। এ প্রশিক্ষণে ডাক্তার, নার্সদের ভুলগুলোও শুধরে নেয়া যায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে এটি অক্সফোর্ড প্ল্যাটফর্মেও ব্যবহার হয়।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ