করোনা ও বন্যা দুর্যোগে উত্তরের অর্থনীতি

করোনা এবং বন্যা দুর্যোগের মধ্যেও উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ক্ষুদ্র, বরগা ও প্রান্তিক চাষি শাক-সবজির আবাদ করে অর্থনীতিতে যোগ করেছেন ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর। এ অঞ্চলে চলতি খরিপ-১, খরিপ-২ এবং রবি মৌসুমে শাক-সবজির আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরের ওপর। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কৃষি বিভাগ পতিত জমিতে শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়ায় কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের ভালো দাম পেয়েছেন।

জানা গেছে, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার করলা চাষি আফজাল  ১ একর জমিতে করলা আবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছেন প্রায় লাখ টাকা। পীরগাছা উপজেলার করলা চাষি বুলবুল মিয়া ৫০ শতক জমিতে করলা আবাদ করে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।  তাদের মতো হাজার হাজার ক্ষুদ্র চাষি সবজি আবাদ করে  এ দুর্যোগে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।

এসব চাষি জানান, এক সময় তাদের সংসার চলত ধারদেনা করে। কিন্তু সবজি চাষের ফলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। তারা এখন সবাই স্বাবলম্বী। এখন তাদের শাক-সবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না। ব্যাপারী বাড়ির আঙিনা থেকে শাক-সবজি কিনে নিয়ে যান। এসব ব্যাপারী ঢাকা চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করেন।

এ ছাড়া খরিপ-১ মৌসুমে ঢেড়স, পটল, চিচিংগা, পুঁই শাক, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পানি কুমড়া, চাল কুমড়া আবার রবি মৌসুমে মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাকসহ অন্যান্য সবজি আবাদ করে প্রায় একই ধরনের লাভ পাচ্ছেন উত্তরের ১৬ জেলার কৃষকরা।

এখন উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোর পাশে দাঁড়ালে দেখা যায়, বিভিন্ন হাটবাজারের পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে সবজি পরিবহনের জন্য। রাত থেকে ভোর হতে হতে এসব ট্রাক সবজি নিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি হলেও সবজির ক্ষতি হয়েছে খুব সামান্য।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৩৬ লাখ টন করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পুঁই শাক, মুলা, টমেটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাক-সবজি কৃষকদের ঘরে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে  ২০  মেট্রিক টন। প্রতি কেজি শাক-সবজির কেজি সর্ব নিম্ন ৩০ টাকা  হলে প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়। সে হিসাবে দুই মৌসুমে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন শাক-সবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০  হাজার ৮০০ কোটি টাকার ওপর।

ঢাকা খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক (ডিএই) কৃষিবিদ আবু সায়েম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন করোনা দুর্যোগে কোনো জমি ফেলে রাখা যাবে না। তাই পতিত জমিতেও সবজি আবাদ হয়েছে। করোনা ও বন্যা দুর্যোগে সরকার সবজি চাষিদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করায় উত্তরাঞ্চলের সবজি চাষিরা এ দুর্যোগেও ভালো দাম পেয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের পুষ্টিবাগান কর্মসূচির সবজি চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন