করোনায় হিমায়িত খাদ্যের বাজার দ্বিগুণ

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ফ্রোজেন ফুডসের বাজার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মহামারির সময়ে মানুষের সীমিত চলাফেরা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিধি-নিষেধ, বাসা থেকে কাজসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। এতে অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্রোজেন ফুডসের ওপর বাড়তি নির্ভরতা তৈরি হয়েছে মানুষের। এমনকি দেশে তৈরি এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাড়তি চাহিদা বেড়েছে বিদেশেও। প্রতিবছর ফ্রোজেন ফুডসের ব্যবসা ২০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেলেও গত দুই বছরে এ বাজার দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষজন হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পাড়া-মহল্লার ছোট খাবারের দোকানে কম যাচ্ছে এবং প্যাকেটজাত স্ন্যাকসজাতীয় ফ্রোজেন ফুডসে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বর্তমানে স্ন্যাকসজাতীয় ফ্রোজেন ফুডসের বাজার প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে। এর মধ্যে প্রাণ-আরএফএল, কাজী ফার্মস, গোল্ডেন হারভেস্ট, ব্র্যাক চিকেন, আফতাব ফুডস, আইজি ফুডস, রিচ ফুড, সিপি, এজি গ্রুপ, প্যারাগনসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠান স্ন্যাকসজাতীয় ফ্রোজেন ফুডস ব্যবসায় জড়িত রয়েছে।’

জানা গেছে, ‘বিদেশেও ফ্রোজেন ফুডসের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। বিদেশে পরোটা ও ভেজিটেবল স্ন্যাকসের চাহিদা বেশি। রপ্তানিতে এর প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ। এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে ঝটপটের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।’

২০১৩ সালে হিমায়িত খাদ্যের বাজারে আসে ঝটপট ফ্রোজেন ফুড। নরসিংদীর প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ঝটপটের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে ঝটপট ব্র্যান্ডের অধীনে প্রায় ৪০ ধরনের পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে পরোটা, শিঙাড়া, সমুচা, রুটি, চিকেন স্প্রিং রোল, চিকেন নাগেট, চিকেন পেটি, চিকেন সসেজ, পুরি, পপকর্ন, স্ট্রিপস, ফ্রেঞ্চফ্রাইসহ বিভিন্ন পণ্য। পণ্যভেদে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে ঝটপট ব্র্যান্ডের ফ্রোজেন খাদ্য কিনতে পারছে ক্রেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘করোনাকালে স্ন্যাকসজাতীয় হিমায়িত খাবারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এসব খাদ্যের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে ভোক্তারা ঝটপট ব্র্যান্ডের পরোটা ও প্রোটিন স্ন্যাকস বেশি কিনেছে। প্রোটিন স্ন্যাকসের মধ্যে নাগেট, চিকেন সমুচা, চিকেন স্প্রিং রোল, চিকেন সসেজ, চিকেন নাগেট, ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ের চাহিদা বেশি। বতর্মানে ঝটপট ব্র্যান্ডের ফ্রোজেন ফুডসের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি।’

বাজার সারাবেলা সুপারশপের ইনচার্জ আনিছুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ফ্রোজেন ফুডসের মধ্যে পরোটা, শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন মমো, চিকেন ফ্রাই, চিকেন নাগেটস, ফ্রেঞ্চফ্রাই, চিকেন মিডবল খাবারগুলোর চাহিদা ২৫-৩০ শতাংশ বেড়েছে। ক্রেতারাও এখন এসব প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাদ্য কিনে স্বাচ্ছন্দবোধ করছে।’

মীনা বাজারের ম্যানেজার শামীম আহমেদ বলেন, ‘করোনার আগের তুলনায় ফ্রোজেন ফুডসের চাহিদা ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে করোনার শুরুতে ফ্রোজেন ফুডসের ব্যাপক চাহিদা ছিল।’

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বর্তমানে ফ্রোজেন ফুডস রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ। বিদেশে ঝটপট ব্র্যান্ডের পরোটা ও ভেজিটেবল স্ন্যাকসের চাহিদা বেশি। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে ঝটপটের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। সম্প্রতি ওমানে রপ্তানি শুরু হয়েছে। শিগগিরই মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাত ঝটপটের পণ্য রপ্তানি শুরু হবে।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক আরো বলেন, ‘ফ্রোজেন ফুড সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য খুচরা বিক্রেতা পর্যায় পর্যন্ত সরবরাহের ব্যবস্থা (কোল্ড চেইন) ঠিক রাখতে হয়। সরবরাহের ব্যবস্থা ঠিক রেখে সর্বোচ্চ মানের পণ্য ক্রেতার হাতে তুলে দিতে এ বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেয় ঝটপট ফ্রোজেন ফুডস।’

সুপারশপ মীনা বাজার, বাজার সারাবেলা ও স্বপ্নের কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারিতে সুপারশপগুলোতে ফ্রোজেন ফুডসের বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘করোনায় ফ্রোজেন ফুডসের বাজার দ্বিগুণে নিয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো গবেষণা না থাকায় প্রবৃদ্ধি হার ঠিক কত, তা নির্দিষ্ট করে তথ্য দিতে পারেননি কেউ। তবে তাঁরা বলছেন, গত দুই বছরে ফ্রোজেন ফুডসের বাজার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে—এর আকার প্রায় ৬০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।’