করোনায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ আজ একটি মহামারির নাম। করোনা আক্রান্ত হলে শারীরিক নানা সমস্যার সম্মুক্ষিণ হতে হয়। যার মধ্যে ফুসফুসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। ফুসফুসে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও মস্তিষ্ক, স্নায়ু, রক্ত সংবহন, কিডনি, চোখ, যকৃতের ক্ষতি করতে পারে।

Firefighters work the scene of a helicopter crash where former NBA star Kobe Bryant died, Sunday, Jan. 26, 2020, in Calabasas, Calif. (AP Photo/Mark J. Terrill)

সুস্থ হওয়ার পরো অনেক করোনা রোগীর মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধি, কোমরে ও মেরুদণ্ডে ব্যথা, ঝিঝি ধরা, অবশ-দুর্বলতা রয়ে যেতে পারে। শ্বাসনালিতে প্রদাহজনিত ক্ষতির কারণে শ্বাসতন্ত্রের সক্ষমতা কমে যেতে পারে। এই ভাইরাসটির আক্রমণে স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাট্যাক হতে পারে।

করোনা যাওয়ার পরেও ৩০ শতাংশ রোগীর কভিড-১৯ পরবর্তী পুনর্বাসন সেবার প্রয়োজন হয়। পুরোপুরি কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে অনেক ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করতে হয়। শারীরিক সক্ষমতার জন্য বিভিন্ন ধরনের পুনর্বাসন চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। কভিড-১৯ আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। যার দরুন অনেক রোগীকে অক্সিজেনের মাধ্যমে ভালো রাখার চেষ্টা করা হয়। এর পাশাপাশি ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন এক্সারসাইজ শুরু করতে হবে। যে সব রোগী মৃদু শ্বাসতন্ত্রে আক্রান্ত- সে সব রোগীকে ওষুধ গ্রহণ ও বিভিন্ন বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। শ্বাসনালি ও ফুসফুসে জমে থাকা কফ সহজে বের করার জন্য ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। যেমন, কিছুক্ষণ বুকভরে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছেড়ে দিতে হবে, বুকভরে শ্বাস নিয়ে কয়েক সেকেন্ড আটকিয়ে রাখতে হবে। তারপর উপুর হয়ে বিছানায় থাকতে হবে প্রতি ঘণ্টায় ২০ মিনিট। উপুর হয়ে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করলে শ্বাসনালির কফ পাতলা হবে এবং শ্বাসকষ্ট কম হবে।

এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, বুক প্রসারিত করার এক্সারসাইজ করার মাধ্যমে করোনা রোগীদের ফুসফুসের আয়তন বাড়বে এবং আরাম বোধ করবে। যদি রোগীর শ্বাসনালিতে তীব্র সংক্রমণ হয় তবে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে অল্পপরিসরে ব্রেদিং এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।

ফুসফুসের শ্বাসনালিতে কফ জমার ফলে রোগীর শ্বাস নিতে অসস্তিবোধ করে। এ অবস্থায় রোগীকে উপুর করে অথবা হাফ লেয়িং পজিশনে শোয়াতে হবে। এর ফলে রোগীর ফুসফুসে বাতাস প্রবেশের সুযোগ পাবে। করোনা সংক্রমণের ফলে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুই ঘণ্টা পর পর কাত করিয়ে শুয়িয়ে রাখা বিশেষ করে ডান কাত করে শুয়ে রাখা।

সংক্রমণের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম। আমরা জানি একজন করোনা রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অনেক। করোনা রোগীর স্বাভাবিক জীবনের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্ট্রাচিং এক্সারসাইজ, বসা থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ এবং হাঁটানো ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়। ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনসহ অন্যান্য রোগী যারা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন।

লেখক:
কাজী সাজিয়া আফরিন
ফিজিওথেরাপিস্ট
এ কে খান সিআরপি, চট্টগ্রাম