করোনার ধাক্কায় উন্নত সাত দেশেই টালমাটাল চাকরির বাজার

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বড় ধাক্কা লেগেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসায় গত কয়েক মাসে চাকরি হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এর ভয়ঙ্কর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি উন্নত দেশগুলোও। শক্তিশালী অর্থনীতির সাতটি দেশে (জি৭) বিভিন্ন মাত্রায় বেড়েছে বেকারত্বের হার।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ধারণা, করোনা সংকটে প্রায় ১৬০ কোটি অস্থায়ী কর্মী ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ ফুল-টাইম চাকরির সমান।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দৃষ্টিতে, জি৭-ভুক্ত দেশগুলোর বেকারত্বের হারের দিকে তাকালেই করোনা সংকটের ভয়াবহ প্রভাবের কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

১. যুক্তরাষ্ট্র
গত ২৫ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহে চাকরি হারানোর দাবি করেছেন প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ। পরবর্তী ছয় সপ্তাহে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে তিন কোটির কাছাকাছি। যদিও এরমধ্যে টানা চার সপ্তাহ নতুন বেকারের সংখ্যা কমতে দেখা গেছে।

বেতন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান এডিপির হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে গত এপ্রিলে বেসরকারি খাত থেকে চাকরি হারিয়েছেন অন্তত দুই কোটি মানুষ।

মার্কিন কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের ধারণা, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে, যা প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে অন্তত চার শতাংশ বেশি।

 

job

২. কানাডা
কানাডার পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশটিতে এপ্রিল মাসে বেকারত্বের হার ছিল ১৩ শতাংশ। মার্চে তা বেড়েছে আরও ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

কানাডায় এ পর্যন্ত ৭২ লাখ মানুষ বেকারত্বজনিত সহায়তার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।

৩. জাপান
জি৭-ভুক্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় জাপানে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার বেশ কম। মার্চে এটি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ মাসে দেশটিতে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬০ হাজার, যা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ২০ হাজার জন বেশি।

তারপরও জাপানে নতুন চাকরির সুযোগ গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পেঁছেছে। এছাড়া চাকরি হারানোর কারণে জরুরি ঋণ সহায়তার জন্য আবেদনের সংখ্যাও বেড়েছে।

৪. যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে লকডাউন শুরুর পর থেকে অন্তত ২০ লাখ মানুষ ইউনিভার্সাল ক্রেডিটের জন্য আবেদন করেছে। এছাড়া দেশটির কর্মজীবীদের অন্তত এক চতুর্থাংশ সরকারের ‘জব রিটেনশনে স্কিম’-এ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কর্মীদের পারিশ্রমিকের অন্তত ৮০ ভাগই এ স্কিমের আওতায় পরিশোধ করা হবে।

কেএমপিজির হিসাবে, লকডাউন চলাকালে যুক্তরাজ্যে বেকারত্বের হার নয় শতাংশের কাছাকাছি থাকতে পারে।

job

৫. ফ্রান্স
ফ্রান্সে বেসরকারি খাতে এক কোটিরও বেশি কর্মীকে সরকারি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ফরাসি শ্রমমন্ত্রীর মতে, ফ্রান্সে প্রতি দুইজন কর্মীর একজনেরও বেশি এবং প্রতি ১০টি প্রতিষ্ঠানের ছয়টিকেই এই সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

৬. জার্মানি
জার্মানিতেও বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে তা যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার তুলনায় যথেষ্ট কম। এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, জার্মান সরকার করোনা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরির জন্য বিশেষ ভর্তুকি দিচ্ছে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ এক কোটিরও বেশি মানুষ এই সুবিধা পেয়েছেন।

তারপরও এপ্রিলে সেখানে বেকার বেড়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার, অনুপাতের হিসাবে প্রায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

৭. ইতালি
মার্চে ইতালিতে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। সরকারের হিসাবে, মাত্র একমাসের ব্যবধানে সেখানে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৬৭ হাজার।

ইতালীয় অর্থমন্ত্রী রবার্তো গুয়ালতিয়েরি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কেউ চাকরি হারাবে না। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় ৭৫ বিলিয়ন ইউরো দেয়ার অঙ্গীকার করেছে।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ