করোনার চেয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ে মৃত্যু বেশি

নিয়মিত করোনাভাইরাস মহামারির খতিয়ান রাখা ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বৈশ্বিক এ মহামারিতে প্রায় ৫৯ লাখ মানুষ মারা গেছে। সংখ্যাটি দৃশ্যত বিশাল হলেও পরিবেশগত কারণে মৃত্যু বছরে এর চেয়ে বেশি। মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দূষণের কারণে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা করোনাভাইরাসের কারণে মৃত্যুর সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি।

প্রতিবেদনে বেশ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য নিষিদ্ধে ‘অবিলম্বে ও উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ’ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, কীটনাশক, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য থেকে আসা দূষণকারী উপাদান মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। বছরে এগুলো কমপক্ষে ৯০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটাচ্ছে, যা করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ১৮ মাসের মৃত্যুর দ্বিগুণ। সার্বিকভাবে দূষণজনিত কারণে মৃত্যু হয় প্রতি ছয়জনে একজনের।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশগত দূষণে মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে বায়ুদূষণ। এতে বছরে ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। দূষণ সম্পর্কিত এসব মৃত্যু নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বেশি, যা মোট মৃত্যুর ৯০ শতাংশেরও বেশি।

প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক ও জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ডেভিড বয়েড বলেন, ‘দূষণ ও বিষাক্ত  উপাদানের কারণে যেসব ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তা মোকাবেলার পদ্ধতিগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে স্বচ্ছ, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই পরিবেশবিষয়ক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ’ আগামী মাসে এই প্রতিবেদন জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ স্বচ্ছ পরিবেশের অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ডেভিড বয়েড জানান, বিশ্বে কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের মৃত্যু হয় সিসাঘটিত কারণে। এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বাসনপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল ও পারফ্লুরোঅ্যালকাইল নামের দুটি রাসায়নিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এই দুটি উপাদান নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, রাসায়নিক শিল্প বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির ১০ শতাংশেরও বেশি গ্রাস করে এবং ৩৩০ কোটি টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে। সর্বোপরি, দূষণ ও বিষাক্ত পদার্থগুলো জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বিপর্যয়মূলক প্রধান পাঁচটি কারণের একটি।

কেনিয়ার নাইরোবিতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনের বৈঠকে রাসায়নিক বর্জ্য নিয়ে আলোচনা হবে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ