নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতি বছর ঈদে রাজশাহীতে চারদিকে থাকে নানা আয়োজন। পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। নগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো সাজে নতুন সাজে। বিশেষ করে পদ্মা পার এবং দুটি পার্ক ঘিরে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু ঈদের বর্ণিল উৎসবের সেই জৌলুশ নেই!
হয়তো জীবনে এমন ঈদ এর আগে কখনোই দেখেনি কেউ। টানা এক মাস সিয়াম সাধনার পর বছর ঘুরে আনন্দঘন ঈদুল ফিতর এবার এসেছে এক ভিন্ন আবহ নিয়ে। বিদ্যমান করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার সতর্কতা ও আম্পানের ক্ষতচিহ্ন নিয়েই সবাইকে উদযাপন করতে হচ্ছে ঈদুল ফিতর।
তবে করোনায় এবার ঈদে বিনোদন কেন্দ্রে যেতে না পেরে বাড়ির ছাদে ও মাঠে ঘুড়ি উৎসবে মেতেছে রাজশাহী নগরীর সব বয়সের মানুষেরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে সেই বাংলার ঐতিহ্য রুঙিন ঘুড়ি উড়িয়ে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে দেখো গেছে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়।
ঈদের নামাজ শেষ করে এসে ঘুড়ি উড়ানোর সকল প্রস্তুতি নিয়ে দুপুর থেকেই রং-বেরঙের ঘুড়ি উড়তে দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর আকাশে। মহানগরীর প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদেই দেখা যাচ্ছে, শিশু কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ সবাইকে একসাথে ঘুড়ি উড়াতে।
ঈদের আনন্দে এবার যেন নগরীর প্রতিটি বাড়ির ছাদে ছাদে চলছে ঘুড়ি উৎসব। ঘুড়ির সুতোয় কাটাকাটি খেলে কিংবা দূর আকাশে ঘুড়ি পাঠিয়ে করোনাকালীন ঈদ আনন্দ ও অবসাদ দূর করার এক সুস্থ প্রতিযোগিতা।
নগরীর তালাইমারি এলাকার জাহিদুল ইসলাম (২৮) নামের একজন ঘুড়িপ্রেমী জানান, দীর্ঘদিন ঘরের মধ্যে থেকে আর ভালো লাগছে না। করোনার জন্য এবার ঈদের দিন কোন বিনোদন কেন্দ্র খোলা নেয় । তাই কোথায় বেড় না হয়ে পরিবারের সাথে ছোট বেলার ন্যায় প্রতিদিন বিকেলে বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়িয়ে ঈদ উদযাপন করছি।
নগরীর দড়িখরবনা এলাকার জহিরুল ইসলাম নামের আরেক জন ঘুড়িপ্রেমী বলেন, রাজশাহী নগরীতে বিনোদনের ব্যবস্থা খুবই কম। তবে করোনার কারনে এবার তাও বন্ধ। ফলে এবার ঈদের আনন্দ যেন ফিকে পরেছে। তবে পরিবারকে সাথে নিয়ে রাড়ির ছাদে ঈদের আনন্দ উদযাপনে এবার মাজা করে ঘুড়ি উড়িয়েছি। সবাই মিলে অনেক আনন্দও হয়েছে। এমন পরিস্থিতে যেন এটাই আমাদের ঈদ আনন্দ।
এদিকে ঈদকে ঘিরে ঘুড়ি উড়ানোর সরঞ্জামের চলছে রমরমা ব্যবসা। নগরীর সেখের চক এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী অসিস বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীতে চড়কি, ভটেং, লেজ বাল্লি, দোবাজসহ বিভিন্ন নামের ঘুড়ি আছে। প্রতি পিস ঘুড়ির মূল্য ১০ টাকা এবং বড় আকারে ঘুড়ি ২০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে ঘুড়ি উড়ানো উৎসব চললেও এত বৃহৎ পরিসরে ঘুড়ি ওড়াতে আগে কখনো দেখা যায়নি। লকডাউনের কারনে মানুষ এবার ঘুড়ি উড়িয়ে সময় পার করছে। তাই বেচাকেনাও বেড়েছে সমানতালে।
আব্দুল কুদ্দুস নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন ঘুড়ি, নাটাই ও মাঞ্জা তৈরি করতে সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। সুতি সুতা ও রঙিন কাগজের চাহিদার সাথে দামও একটু বেশী তাই এবার ঘুড়ি ও নাটাইয়ের দাম একটু বেশী। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ টির মতো নাটাই ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে যা ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়।
ফলে বিভিন্ন বাড়ির ছাদে থেকে পাখির মত রঙ বেরঙের ঘুড়ি উড়ছে আকাশে। নানা ডিজাইন আর রঙের ছটায় পুরো আকাশ ছেয়ে গেছে। আর এভাবেই পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে রঙিন ঘুড়ি উড়িয়ে ঈদের আনন্দ কাটাছে রাজশাহীবাসীর।
স/অ