করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার হার কি কম?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছে ৫০ জন।

আর এই সময়ে মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪৯ জন।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, তাহলে কী বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার তুলনায় মৃত্যুহার বেশি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট করে উত্তর দেয়ার সময় এখনো আসেনি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, মৃতের সংখ্যা বা সুস্থ হওয়ার সংখ্যা এটি সারা দেশের প্রেক্ষাপটে খুব বড় কোন সংখ্যা না। এটি দিয়ে সারা দেশে রোগী বা অন্য কোন সংখ্যাও বোঝা যায় না। এই সংখ্যা দিয়ে বোঝা যায় যে, রোগের গতিপথ নিম্নমুখী নাকি উর্ধ্বমুখী।

তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। তাই পুরো বিষয়টাই একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা।”

“এই সংখ্যা আসলে সিদ্ধান্তে আসার মতো কিছু না।”

এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে সুস্থ হওয়ার হার কম সেটি বলার সময় এখনো আসেনি।

তিনি বলেন, যারা সুস্থ হচ্ছেন তাদেরকে সুস্থ না বলে আসলে বলা উচিত সংক্রমণ মুক্ত হচ্ছেন।

অর্থাৎ তাদের মধ্যে লক্ষণ তেমন ছিল না বা মৃদু লক্ষণ ছিল কিন্তু ভাল হয়ে গেছে এমন ব্যক্তিরা।

পর পর দুটি নমুনা পরীক্ষায় যদি কারো করোনাভাইরাস সংক্রমণের নেতিবাচক ফল আসে তাহলে তাকে সংক্রমণ মুক্ত বলা হয়। তবে তার জন্যও সময় দরকার হয়।

তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, পর পর দুটি পরীক্ষায় নেতিবাচক ফল আসতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে।”

তার মতে, সে হিসেবে আমাদের দেশে সপ্তাহ খানেক ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হারে বেড়েছে। অর্থাৎ তাদের সুস্থ হওয়া বা সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার সময়সীমা এখনো আসেনি।

“তাদের সুস্থ হওয়ার পিরিয়ডটাই এখনো যায়নি,” তিনি বলেন।

এখন যারা সুস্থ হচ্ছেন তাদের মধ্যে সংক্রমণ আগে ধরা পড়েছে। যখন আক্রান্তের সংখ্যাও কম ছিল।

কারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষ কোন চিকিৎসা সেবা ছাড়াই সুস্থ হয়ে যান। অর্থাৎ তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হয় না।

বাকি ১৮ বা ২০ ভাগ মানুষকে হাসপাতালে আসতে হয়। কিন্তু এদের সবার আবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। এদের বেশিরভাগকেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

বাকি ৫ থেকে ৬ ভাগ মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়ার দরকার হয়।

হাসপাতালে তিন ধরণের রোগী আসেন। যাদের মধ্যে এক ধরণের রোগীদের বলা হয় “হেলদি ক্যারিয়ার”। অর্থাৎ তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কিন্তু কোন লক্ষণ নেই। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।

দ্বিতীয়ত, যাদের মৃদু লক্ষণ থাকে তাদেরকেও চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

তৃতীয়ত, যাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে, জ্বর বেশি, রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হচ্ছে এবং প্রচণ্ড ক্লান্ত বোধ করছে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীদের ভিড় কমেছে।

হাসপাতালে করোনাভাইরাসের কী সেবা দেয়া হচ্ছে?

শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বিশ্বের কোথাও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা প্রতিষেধক নেই।

এ বিষয়ে ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, এ পর্যন্ত ৫৬ থেকে ৬০টির মতো ওষুধ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে সেগুলো করোনাভাইরাস ঠেকাতে কাজ করে কিনা। তবে এগুলোর কোনটির বিষয়েই এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।

তাহলে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদেরকে কী ধরণের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেটা মূলত রোগীদের উপসর্গ ভিত্তিক।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, অনেককেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের মতো ঔষধ দেয়া হয় তবে বেশিরভাগ চিকিৎসাই রোগীর উপসর্গ ভিত্তিক।

অর্থাৎ কারো যদি, জ্বর থাকে তাহলে তাকে জ্বরের ওষুধ দেয়া হয়। আবার কারো যদি শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয় তাহলে তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। এটা পুরোটাই নির্ভর করে যে, ওই নির্দিষ্ট রোগীর লক্ষণ আসলে কি তার উপর।

ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, যাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি অন্য কোন সংক্রমণ থাকে তাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।

বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বৈশিষ্ট্য কী?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে এখনো সুনির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্য ধরা পড়েনি।

চীন বা ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বয়স্ক বা তাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল।

কিন্তু মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমন কোন সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই। কারণ বাংলাদেশে একজন শিশুও এরইমধ্যে মারা গেছে। এমন অনেকে মারা গেছেন যাদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

তিনি বলেন, তবে যারা মারা গেছে, তাদের বেশিরভাগই হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পর পরই মারা গেছে। বা অনেকে এসেই মারা গেছে। আবার অনেককে মৃতই নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া অনেকে মারা যাওয়ার পর তার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে নিতে মারা গেছে এমন সংখ্যা খুবই কম। তবে যারা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে পড়ছেন তারা বেশিরভাগ বাড়িতেই এমন অবস্থার মুখে পড়ছেন।

 

 

সুত্রঃবিবিসি