কম সুদের বৈদেশিক ঋণে নজর

মহামারি করোনা পরিস্থিতি সামলে উঠতে এবারও বিশাল ঘাটতির বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ঘাটতির এই অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে জিডিপির প্রায় ৬.২ শতাংশ। তবে এবার ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ নির্ভরতা কমিয়ে কম সুদের বৈদেশিক উৎসর ঋণে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। সূত্র বলছে, এবার বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩১ শতাংশ বাড়ছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ঋণনির্ভরতা বাড়ছে মাত্র ৩ শতাংশ। আবার অভ্যন্তরীণ উৎসর মধ্যে ব্যাংকঋণনির্ভরতা প্রায় ১৫ শতাংশ কমছে। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।

সাধারণত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক—এ দুই উৎস থেকে ঘাটতি মেটানো হয়ে থাকে। তবে বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে অভ্যন্তরীণ উৎসর ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় সরকারকে। অভ্যন্তরীণ খাত আবার দুই ভাগে ভাগ করা। একটি হলো ব্যাংক খাত, অন্যটি হলো সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় কম হলেও ব্যাংকব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ে।

সূত্র মতে, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার ছয় লাখ টাকার বেশি ব্যয়ের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী, যার মধ্যে অনুদানসহ সার্বিক ঘাটতি ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির প্রায় ৬.২ শতাংশ, যা নতুন রেকর্ড। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয় এক লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬.১ শতাংশ ছিল।

এবার ঘাটতির পরিমাণ বড় হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দুই উৎসই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। তবে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের লক্ষ্য বেশি বাড়ছে। এবার বৈদেশিক উৎস থেকে সরকার অনুদানসহ মোট ঋণ পাওয়ার আশা করছে এক লাখ পাঁচ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ২৫ হাজার ২১১ কোটি টাকা বা ৩১.৫০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে অনুদানসহ ঋণ পাওয়ার আশা করা হয় ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্য কমিয়ে ধরা হয়েছে ৭২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।

এবার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ঋণ পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বা ৩.১৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের চেয়ে এবার ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমছে প্রায় ১২ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বা ১৪.৭৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তবে করোনার কারণে এবার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস পাঁচ দিনে (১ জুলাই থেকে ৫ মে) সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিট দেড় হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়েছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত নিট ঋণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল।

সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টো। বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা খুব একটা নেই। অন্যদিকে বিনিয়োগ ভাটায় ব্যাংকের হাতেও প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। তাই সরকারকে ঋণ দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোরও কোনো সমস্যা নেই। এর পরও বাজেটে টার্গেট থাকলেও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে না। ব্যাংকঋণের চাহিদা কম হওয়ার পেছনে অস্বাভাবিক গতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বৃদ্ধিকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অভ্যন্তরীণ উৎসর মধ্যে এবার ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ শতাংশ এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.৬০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে পাঁচ মাস না যেতেই অতিক্রান্ত হয়ে যায়। এর পর থেকে লক্ষ্যের অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে হচ্ছে সরকারকে এবং সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। কিন্তু এই লক্ষ্যও অতিক্রান্ত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকা।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ