কপোতাক্ষের খাল দখল : জলাবদ্ধ সাত গ্রামের মানুষ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

যশোরের কেশবপুরে একটি খালের মুখ দখল করে নেওয়ায় জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন সাত গ্রামের মানুষ।

কপোতাক্ষ নদের এই খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করেছেন ঘের মালিক। ফলে টানা বর্ষণের পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় তলিয়ে গেছে অন্তত ১ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান। পানি ঢুকেছে ৩ শতাধিক বাড়িতে।

খাল দখলের এ ঘটনাটি ঘটেছে কেশবপুর উপজেলার বিল বোয়ালিয়ায়। আর এই দখলের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার রঘুরামপুর, ঘোপসেনা, বাঁশবাড়িয়া, সোহরাবপুর, মির্জানগর, গোপালপুর ও বরণডালি এই সাত গ্রামের মানুষ।

দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরতে ঘোপসেনা গ্রামের বৃদ্ধা সফলজান বেগম বলেন, ‘ঘরবাড়ি সব বুইড়ে (ডুবে) গেছে, এহন তো মরলিও কবর দিয়ার জাইগা নেই। লাশ ভাসায়ে দিতি অবেনে।’

সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ওজিয়ার রহমান জানালেন, কপোতাক্ষের খালের মুখে দখল করে ঘের নির্মাণ করায় প্রতিবছরই তারা জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। ফসলের খেত ভেসে যাচ্ছে, বাড়িতে পানি উঠছে। তাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। অথচ যদি খালের মুখটি ছেড়ে দিয়ে মাছের ঘের করা হতো, তাহলে তাদের এই জলাবদ্ধতার পানি নেমে যেতো, দুর্ভোগও থাকত না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোরের কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী ও সাগরদাড়ি ইউনিয়নের বিল বোয়ালিয়ায় প্রায় ৫০০ একর জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে একটি মাছের ঘের করা হয়। এরপর গত বছর আরও ৫০০ একর জমি নিয়ে আরেকটি মাছের ঘের করা হয়েছে।

উপজেলার বরণডালি ও মির্জানগর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদের একটি খালের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এই বিলের। ঘেরের মধ্যেই পড়েছে এই খালের সংযোগমুখ।

সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি স্লুইস গেট রয়েছে। এই গেটের সামনেই ঘের মালিকরা আরও একটি স্লুইস গেট করে বিল এবং বিল সংলগ্ন এলাকার পানি নিষ্কাশন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন।

Jessore1

স্থানীয়রা জানান, গত দুই তিন মাস এই মাছের ঘেরের ৪টি ডিপটিউবয়েল (গভীর নলকূপ) দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পানি উঠানো হয়েছে। ফলে ঘের ও বিল এলাকায় পানিতে ভরে গেছে।

কিন্তু এরপরই টানা বর্ষণ ওই সাত গ্রামের মানুষের ললাটে লিখে দিয়েছে দুর্ভোগ। খালের মুখ বন্ধ থাকায় অব্যাহত বৃষ্টির এই পানি বিল উপচে ফসলের খেত তলিয়ে ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে।

বিল বোয়ালিয়ার ওই ঘেরের বাইরে অন্তত ১ হাজার একর জমি এখন ওই ঘের উপচানো পানির নিচে। এই খেতের অধিকাংশতেই রোপন করা হয়েছিল আমন ধান।

রঘুরামপুর গ্রামের শামসুর রহমান অভিযোগ করেন, বিল বোয়ালিয়ার ঘেরের মধ্যে তাদের ২০ বিঘা জমি রয়েছে। চারপাশের জমি ঘের মালিক নিয়ে নেওয়ায় তাদের জমিও ঘেরের মধ্যে চলে গেছে।

ঘেরের জন্য তারা কোনো টাকা নেননি, কিন্তু তাদের জমিও ঘেরের পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘেরের বাইরেও ১০ বিঘা জমির আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।

রঘুরামপুর গ্রামের মামুন হোসেন জানালেন, ঘেরের পানি এখন তাদের উঠানে। আরেকটু বৃষ্টি হলেই পানি ঘরে ঢুকে পড়বে।

সোহরাবপুর গ্রামের শামসুদ্দিন সরদার জানান, তার ৩ বিঘা আমনের খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়ির উঠোন ছুঁই ছুঁই করছে।

পানি ঢুকে গেছে রঘুরামপুর গ্রামের নূর আলী খাঁর বাড়িতে। তিনি জানালেন, প্রায় এক মাস ধরে তারা এই দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। আগেই ডুবে গেছে ৫ বিঘা আমনের খেত। পরে বাড়িতেও পানি ঢুকেছে।

সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ওজিয়ার রহমানের মতে, সব মিলিয়ে এই এলাকার ১ হাজার ফসলের খেত এই ঘেরের পানিতে তলিয়ে গেছে।

সাত গ্রামের অন্তত ৩০০ বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। কপোতাক্ষের খালের মুখ বন্ধ থাকায় এই পানি নামতে পারছে না।

কপোতাক্ষের খালের মুখ আটকে করা এই ঘেরের অন্যতম মালিক কেশবপুর শহরের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান। মুঠোফোনে কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি দাবি করেন, তার ঘেরের কারণে কোনো জলাবদ্ধতা হয়নি। বৃষ্টির কারণে এই জলাবদ্ধতা হয়েছে। খালের মুখে স্লুইস গেট বসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন ওই গেট খুলে দিলে উল্টো নদীর পানি ওই এলাকায় ঢুকে পড়বে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ রায়হান কবীরের সঙ্গে।

তিনি জানান, কেশবপুরে কিছু কিছু মাছের ঘের অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে কোনো কোনো এলাকায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বিল বোয়ালিয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

 

সূত্র: রাইজিংবিডি