কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বিদ্যালয় গড়তে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিক্ষায় বিনিয়োগ-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এই স্লোগান সামনে রেখে কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বিদ্যালয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বিদ্যালয় প্রচারাভিযান কার্যক্রমের সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ রাজশাহী অঞ্চল এর আয়োজন করে। আজ রোববার সকাল ১০টায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ, শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সমন্বয় সভায় কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বিদ্যালয় (Safe School for Girls Campaign Program) কার্যক্রমের লক্ষ্য  ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়। সভায় বলা হয়, এই কার্যক্রম সফল করার মাধ্যমে নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য সমান সুবিধা, ন্যায় বিচার ও অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে বর্তমান সরকারের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ বাস্তবায়নসহ “টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা-২০৩০ (এসডিজি)” অর্জনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

সভায় আরো জানানো হয়, উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে স্কুলগামী মেয়েদের সংখ্যাবৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবার ও স্থানীয় লোকদের সচেতন করা, যেন তারা বুঝতে পারে, শিক্ষিত মেয়েরা সকলেরই উপকারে আসে। কন্যাশিশুদের জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থী কমিটি/ইয়ূথ ইউনিটকে তৎপর রাখা এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সকলে এক সাথে শিশুবিবাহ বন্ধে সচেষ্ট রাখার কথাও তুলে ধরা হয় সভায়।

শিশুবিবাহ প্রতিরোধ এবং বিয়ের জন্য মেয়েদের স্কুল ছেড়ে দেয়াকে নিরুৎসাহিত করা এবং জীবনে সফল হবার জন্য আতœবিশ্বাসী করে তোলার মাধ্যমে একটি স্কুলের এমন একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে কন্যাশিশুরা জীবনে সফল হবার জন্য উৎসাহিত হয়। কন্যাশিশুদের স্কুলের মধ্যে ও যাতায়াতের পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুলে  মেয়েদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে শিক্ষক, এসএমসি, অভিভাবক, নারী নেত্রী, স্থানীয় স্বেচ্ছাব্রতী এবং ইয়ূথ ইউনিটকে এক সঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার উপর জোর দেন বক্তারা।  মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল-আমিন বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর রাজশাহী এরিয়া সমন্বয়কারী সুব্রত কুমার পাল। তিনি সমন্বয় সভার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরেন পরে আই ওয়াজ ওর্থ ফিফটি শিপ নামে একটি মুভি প্রদর্শন করা হয়।

সমন্বয় সভায় বসন্তকেদার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরে আল সিদ্দিকী বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করতে না পারলে কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বিদ্যালয় করা সম্ভব হবেনা। তাই বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে এবং মেয়েদের স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত করতে হবে।
বসন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.তোফাজ্জ্বল হোসেন বলেন, কন্যাশিশুর ভবিষ্যত, বাংলাদেশের ভবিষ্যত। বাংলাদেশের ভবিষ্যতে সুনিশ্চিত করার জন্য কন্যাদের বেশী করে যতœ নিতে হবে। তাহলেই একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। কন্যাশিশুর পরিপূর্ণ মেধার বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমেই সমাজকে আলোর পথ দেখাতে হবে।

মৌপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. দেরাজ উদ্দিন বলেন, আগে যেখানে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে ২টির মতো বিয়ে হতো, আমাদেও অগোচরে, বর্তমানে উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে বিগত ৫মাসে একটি বিয়েও আমরা হতে দেয়নি। হাঙ্গার প্রজেক্ট কে কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল-আমিন বিশ্বাস বলেন, বাল্যবিবাহ সমাজের জন্য একটি অভিশাপ। এই অভিশাপ সবাই মিলে দূর করতে হবে, আর নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে না পারলে সমাজকে কোন ভাবেই এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবেনা। তাই সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সমন্বয় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. রাশেদুল ইসলাম, ইউপি সদস্য মো. বদিউজ্জামান, মো. এমদাদ সরদার, মো.আফসার আলী, মো. নাসির উদ্দিন, নারী ইউপি সদস্য মোছা. সুফিয়া খাতুন, সহায়ক শিক্ষক মো. আকবর হোসেন, সমাজকর্মী ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ইয়ূথ লিডার মোঃ নূরুল ইসলাম মাসুদ, মোছা. শাবানা খাতুন ও  দি হাঙ্গার প্রজেক্ট কর্মী ইসরাফিল হোসেন প্রমূখ।
স/শ