কদর কমেছে ধান কাটা শ্রমিকদের

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে হারভেস্টার মেশিনে কৃষকের মুখে হাসি থাকলেও হতাশায় দিনের পর দিন পার করছেন শ্রমিকরা। হাজার টাকা খরচ করে কাজের সন্ধানে এসেও কাজ না পেয়ে হতাশায় দিন পার করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। উপজেলা সদরসহ গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার’ মেশিন। অল্প সময় ও কম খরচে দ্রুত ধান মাড়াইয়ের এই যন্ত্রটি এখন কৃষকদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন মাঠ দখল করায় আগের মতো কাজ নেই ধান কাটার শ্রমিকদের। তারা বছরের এক মাস কৃষকের ধান কেটে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে বাড়ি ফিরলেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন।

কৃষকরা জানান, শহরের মতো কৃষির আধুনিকতা এখন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে শুধু ধান কাটা নয়, একই সঙ্গে মাড়াই, পরিষ্কার ও সংগ্রহ করা যায়।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিন বদল হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে গ্রামেও এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে কৃষকদের ধান উৎপাদনে তেমন বেশি লাভ হতো না। খরচ পুষিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হতো। কারণ ধান কাটার মজুরি খরচ, বাজার দর ও উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতো লাভ কেমন হবে। জমিচাষে গরু-মহিষের লাঙলের বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর আর ধান কাটতে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার। বিভিন্ন সময়ে কৃষকরা ধান কাটার সময় পড়তে হতো শ্রমিক সমস্যায়। খরচও হতো অধিক টাকা। পড়তে হতো লোকসানে। এখন সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মেশিন আসাতে সময় এবং অর্থ দুটোয় সাশ্রয় হচ্ছে। এ ছাড়া একই জমিতে খুব সহজেই অন্য ফসল করা যায় বলে জানান।

ভাতগ্রাম ইউনিয়নের মহদিনগর ভাতগ্রামের কৃষক আছলাম মিয়া জানান, মির্জাপুরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়নি। তিনি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কেটে থাকেন। ছোট জমির ধান কাটতে শ্রমিকের প্রয়োজন হওয়ায় শ্রমিক নিতে এসেছেন।

কৃষক রেজাউল করিম, আনোয়ার হোসেন, আসাদ মিয়া জানান, আগে আমাদের ধান কাটতে হতো শ্রমিক দিয়ে। তারা কাচি দিয়ে ধান কাটত। অনেক সময় ধান কাটার শ্রমিকের সংকট দেখা দিত। সনাতন পদ্ধতিতে একর প্রতি ধান কাটায় খরচ হত ১২ হাজার টাকা কিন্তু হারভেস্টার মেশিন দিয়ে খরচ হচ্ছে ছয় হাজার টাকা।

ধান কাটতে লালমনিরহাট থেকে ৭ জনের একটি দল মির্জাপুরে এসেছে। আসতে তাদের প্রত্যকের ৭৫০ টাকা করে খরচ হয়েছে বলে জানান মনজুল হক, ফজলুল হক, আমিনুর ও নজরুল। ধান কাটার মৌসুম শুরু হলে তারা মির্জাপুরে আসেন এবং ২০/২৫ দিন কাজ করে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করে বাড়ি চলে যান। ধান কাটার মেশিন আসাতে তাদের কাজ কমে গেছে। কৃষক আর শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে চায় না। এ কারণে তারা আগের মতো কাজ করতে পারে না বলে জানান।

কুড়িগ্রাম থেকে ধান কাটতে এসেছেন ৯ জন। এদের মধ্যে রবিউল ইসলাম, আজিবর, এরশাদ আলী ও খালেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, প্রত্যেকেই ১২০০ টাকা খরচ করে গাজীপুরে চারদিন কাজ করে বৃহস্পতিবার মির্জাপুরে এসেছেন। গাজীপুরে ৯০০ টাকা করে কাজ করলেও মির্জাপুরে এসে কাজ পাচ্ছেন না। কয়েকজন কৃষক আসলেও দাম বলছেন ৬০০ টাকা। এ সময় কৃষক তাদের বলছেন এ টাকায় না গেলে মেশিন দিয়ে ধান কাটবেন। এ অবস্থায় আমরা হতাশার মধ্যে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।

লালমনিরহাট থেকে আসা শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলেন, মেশিন আসার পর শ্রমিকদের কদর কমে গেছে। ধান কাটার মৌসুমে প্রত্যেক শ্রমিক ২০/৫০ হাজার টাকা উপার্জন করলেও এখন ৩/৪ হাজার টাকা হয় বলে জানান।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা শ্রমিক রামকুমার চন্দ্র্র বর্মন জানান, কাজের আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে মির্জাপুরে এসেছি। ৫দিন ধরে কাজ নেই। কাজ না থাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। এর আগে ১৪ দিন কালিয়াকৈরের বিভিন্ন স্থানে ১১০০ টাকা করে কাজ করেছি। মির্জাপুরে আসার পর কেউ দামই বলছে না।

ধামরাই উপজেরার পাড়াগ্রামের মলি আক্তার জানান, তিনি শ্রমিক নিতে মির্জাপুরে এসেছেন। ৫ জনকে ৬০০ টাকা করে বলা হয়েছে। তারা যাবে না বলে জানান। এ দামে শ্রমিক না গেলে মেশিন দিয়ে ধান কাটবেন বলে জানান।

কৃষি অফিসার সঞ্জয় কুমার পাল জানান, চলতি বছর মির্জাপুরে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আধুনিক হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের জন্য সুফল বয়ে আনছে। কারণ এতে সময় এবং অর্থ দুটো কম লাগছে। আস্তে আস্তে সব এলাকায় মেশিনটি ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা উপকৃত হবে। এতে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আধুনিক এ মেশিনটি প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সূত্র; কালের কণ্ঠ