কত বেতন পান নৈশ প্রহরীরা?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: সারারাত জেগে বাসা-বাড়ি, পাড়া-মহল্লা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত পাহারা দেন নৈশ প্রহরীরা। তারা নির্ঘুম থাকেন বলেই ব্যস্ত নগরীর বাসিন্দারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নৈশ প্রহরীদের রাত জাগার বিনিময়ে যে পারিশ্রমিক মিলে তা খুবই সামান্য। সংসার চালানো তো দূরের কথা রাজধানী ঢাকায় একজনের জীবন নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে যায়। এরপরও বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে কম বেতনেই মানুষের জানমালের পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

 

নগরী ঘুরে দেখা গেছে, একটু বয়স হলেই কাজের ক্ষেত্র ছোট হয়ে যায়। অন্য কাজ না পেয়ে বয়স্করা নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করছেন। বেতন খুব কম কিন্তু কাজ না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করছেন তারা। এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে গার্ডদের বেতনও বাড়ান না বাড়ির মালিক ও কোম্পানিগুলো।

 

মগবাজার ‍দিলু রোডের সিকিউরিটি গার্ড ইউনুস। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব এই রোডে চারটা বাড়ি। আমরা দুজন মিলে পাহার দেই। একজন রাস্তার এই পাশে অন্যজন ওই পাশে।’

 

কত বেতন পান জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইউনুস বলেন, ‘বেতন শুনে কি লাভ। যা বেতন পাই তাতে সংসার চলে না। বয়স হইছে, অন্যকিছু করতেও পারি না। সবার বেতন বাড়ে আমাদের বাড়ে না।’

 

খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের ৫০ ঊর্ধ্বো সিকিউরিটি গার্ড আলিমুদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ৪ বছর ধরে এই চাকরি করছি। ডিউটি শুরু হয় রাত ১২টায়, শেষ হয় সকাল ৮টায়। বেতন পাই ৫ হাজার টাকা। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বাকি দুজনই পড়াশুনা করে। সংসারের খরচ মেটাতে রাতভর জেগে ডিউটি করার পর দিনে একটি চায়ের দোকান চালান আলিমুদ্দিন।

 

তিনি বলেন, ‘রাইতে ডিউটি করি যে টাকা পাই তাতে চলে না। তাই দিনে চা বিক্রি করি। অন্য কোনও কাজ পাই না তাই নাইট গার্ডের কাজ করি।’

 

বেতন বাড়াতে বললে চাকরি থাকে না বলে অভিযোগ করেন পরীবাগের একজন সিকিউরিটি গার্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গার্ড বলেন, ‘পাঁচ বছর টানা চাকরি করছি, বেতন বাড়ে নাই। গত বছর মালিকরে বললাম বেতন বাড়ানোর জন্য। উল্টো পরের মাসে আমাকে আর আসতে হবে না বলে জানিয়ে দিল। তাই বেতন বাড়াতে বলার আর সাহস পাই না।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘গার্ডের চাকরি সাধারণত পরিচিতদের দেওয়া হয়। বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে বেতন নিয়ে দর কষাকষি করা যায় না। ওরাও ইচ্ছে করে বেতন বাড়ায়। আমাদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয় না।’

 

তবে টানা ১১ বছর ধরে একই বাসায় চাকরির পর বেতন ৯ হাজার টাকা হয়েছে বলে জানান ধানমণ্ডি ১৫ নম্বরে একটি বাসার সিকিউরিটি গার্ড ইসমাইল। তিনি বলেন, ‘৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেছিলাম। ১১ বছর পর তা হইছে ৯ হাজার টাকা।’

 

নিরাপত্তা রক্ষীদের অনেক ঝামেলায় পড়তে হয় বলে জানান বনশ্রী বি ব্লকের নাইট গার্ড বাসের। তিনি বলেন, ‘রাইত বিরাইতে কোনও ঝামেলা হইলে আমাদের সামলাইতে হয়। সারারাত সতর্ক থাইকতে হয়। কোথায় কিছু হয় সবার আগে পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে যায়। আবার চোর-ছিনতাইকারীরা মোকাবিলায় আমাদের সবার আগে যেতে হয়। হাসমলার শিকার হতে হয়। কিন্তু বেতন, সুযোগ-সুবিধা বলতে আমাদের কিছু নেই।’

সূত্র:বাংলাট্রিবিউন