কঠোর গোপনীয়তায় বিএনপি, সঙ্গীদেরও জানাচ্ছে না কর্মসূচি

আগামীকাল বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করার জন্য এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক অনুমতি পায়নি বিএনপি। তবে, বিলম্ব হলেও আশা ছাড়ছে না দলটি। শেষ মুহূর্তে হলেও সমাবেশের সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনছেন নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি যেন ফাঁস না হয় সেজন্যও কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করছে বিএনপি।

সূত্রে জানা যায়, মহাসমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেওয়া হবে। এটি সফল করতে ধারাবাহিক এবং কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে দলটির যুগপৎ সঙ্গীরা। কিন্তু সেক্ষেত্রে আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই সরকারের পক্ষ থেকে দমন, নিপীড়ন ও গ্রেফতারের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নেতাকর্মীরা বলছেন, পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়ার আগে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে কি না— সেটি ভাবা হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, সে বিষয়ে আগামীকাল সকালে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের জানানো হবে। কারণ, আগে জানানো হলে সেটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যাবে। এতে নেতাকর্মীদের আকর্ষণ কমে যায়। কর্মসূচি নিয়ে বিশেষ যে গোপনীয়তা, তা রক্ষা করা যাবে না। সরকারি পেটোয়া বাহিনীর দমন-পীড়নও বেড়ে যেতে পারে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এ সরকার তো অবৈধ, তারা তো জনগণের সরকার নয়। তাই তারা সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে। একটি সরকার যখন পতনের দিকে যায়, তখন এ ভুলগুলো করে। আমাদের মহাসমাবেশ হবে। নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে। সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আগামীকালের সমাবেশে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় থেকেও নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। আমাদের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করাই। এখন সরকার যদি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে না দেয়, তাহলেও যা হওয়ার তা-ই হবে।

‘গত ১০ ডিসেম্বর আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সে সময় পুলিশ আমাদের কার্যালয় ভাঙচুর, তল্লাশি ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে। এবার আমরা বসে থাকব, সেটা হবে না। এখন যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো সিদ্ধান্ত আমাদের আছে।’

এ নেতা আরও বলেন, ‘আল্টিমেটাম দিলে খুব কম সময়ের জন্য দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যেসব নেতাকর্মী কাল সমাবেশে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসবেন, তাদের রাখার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তারা এলাকায় চলে গেলে তাদের আবার ঢাকায় নিয়ে আসাও একটা চ্যালেঞ্জ। তাই সবকিছু ভেবেচিন্তে করতে হবে।’

এদিকে, গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আন্দোলন-পরবর্তী কর্মসূচির ধরণ নিয়ে আলোচনা হলেও এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আগামীকাল সকালের দিকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। তবে, কালকের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, নাকি আরও কিছুদিন প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া হবে— এ নিয়ে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিএনপির মধ্যে আছে। তবে, কর্মসূচির ক্ষেত্রে সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার অনুমতি দিলেও সমাবেশ হবে। না দিলেও মানুষ রাস্তায় নামবে। মানুষ আর এ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

‘কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে সেটি আগামীকাল সকালে জানা যাবে।’

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, আগামীকালের মহাসমাবেশে সর্বোচ্চ লোকের উপস্থিতি নিশ্চিতে আগে থেকেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমাবেশের দিন পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে আগে থেকেই অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। নেতাকর্মীরা সরকারের সব ধরনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মহাসমাবেশ সফল করবে। কারণ, সময় এসেছে রাজপথে ফায়সালা করার।

এদিকে, বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং এর আশপাশের গলিতে জড়ো হতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। কার্যালয়ের ভেতরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে চলছে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক। অন্যদিকে, কার্যালয়ের পাশে বাড়ছে পুলিশের উপস্থিতি।

এদিন বেলা সাড়ে ৪টার দিকে মহাসমাবেশের প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। এখনও সেই সংবাদ সম্মেলন হয়নি।