‘পানির ফাঁদে কমছে উৎপাদন’

ওসমান-রাজ্জাকের কাছে জিম্মি ৭০০ কৃষক!


মহাদেবপুর প্রতিনিধি :

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ও সঠিক নজরদারির অভাবে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সিদ্দিকপুর গ্রামের কৃষকেরা শোষণমূলক সেচের পানি বণ্টন ব্যবস্থার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেও সময়মতো সঠিক পরিমাণ সেচ মিলছে না। এতে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা ক্ষতির মুখে পরছেন তারা।

আর নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ইচ্ছেমতো সেচমূল্য আদায় করার বিষয়টি এখন ওপেন সিকরেট। এখানে সেচের জন্য বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ চাষিদের একমাত্র ভরসা। স্থানীয় দু’জন প্রভাবশালী ডিপ অপারেটরের কাছে জিম্মি সিদ্দিকপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৫টি গ্রামের ৬০০-৭০০ কৃষক। এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ চাষিরা। তাদের- বক্তব্য এ যেন সর্বাঙ্গে ব্যথা, উত্তরণের পথ অজানা। কিন্তু এনিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনোই তৎপরতা নেই। তাদের রহস্যজনক নীরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি, বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিন গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটর (ডিপ অপারেটর) নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। উপজেলার সিদ্দিকপুর গ্রামের মাঠে দুটি সরকারি গভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপ অপারেটর হিসেবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিয়োগ পায় মহাদেবপুর সদরের ধান-চাল ব্যবসায়ী ওসমান গণি ও তার ভাই আব্দুর রাজ্জাক।

তারা ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের বড় ভাই সিদ্দিকপুর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে লোকমান হোসেন ওই দুটি নলকূপ থেকে সিদ্দিকপুর, বকাপুর, চকচান, বাজিতপুর, শিবরামপুর ও আখেড়া গ্রামের ৬০০-৭০০ জন কৃষকের প্রায় ৯০০ বিঘা জমিতে সেচের পানি দেন। নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে কৃষকদের থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। অতিরিক্ত টাকা না দিলে জমিতে সেচ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কৃষকদের দাবি- অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেও সময়মতো ক্ষেতে সঠিক পরিমাণ সেচের পানি পাওয়া যায় না। এতে ফসল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। নলকূপ অপারেটরের হাতে ‘জিম্মি’ হয়ে পরেছেন তারা। এসব নিয়ে কৃষকেরা প্রতিবাদ করলে মারপিটসহ তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে এলাকার কেউ এদের বিরদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে না বলেও দাবি করেন শিবরামপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম, সিদ্দিকপুর গ্রামের রতন চন্দ্র মহন্ত, ছমির, তমেজ, মোহাম্মদ আলীসহ অন্তত ৪০ জন ভুক্তভোগী কৃষক।

সিদ্দিকপুর মৌজার গভীর নলকূপ অপারেটর ব্যবসায়ী ওসমান গণির সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অপর নলকূপ অপারেটর আব্দুর রাজ্জাক জানান, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সেচের পানির কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে তাদের ভাই লোকমান ওই দুটি ডিপ পরিচালনা করছে। সামনে মৌসুম থেকে তিনি এবং ওসমান নিজেই নলকূপ দুটি পরিচালনা করবেন বলে দাবি করেন এই ধান-চাল ব্যবসায়ী।

এদিকে, গত ৮ নভেম্বর উপজেলার সিদ্দিকপুর গ্রামের শাহীন শাহ নামের এক ব্যক্তি বিএমডিএ’র ওই দুটি গভীর নলকূপের ব্যাপারে সরকারের কেন্দ্রীয় অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (জিআরএস) মাধ্যমে নওগাঁ জেলা প্রশাসনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর ৯ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহেল রানা অভিযোগটি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পানিয় জল সরবরাহ শাখায় প্রেরণ করেন।

শাহীন শাহ এর দায়ের করা অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিএমডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পানিয় জল সরবরাহ শাখার প্রধান শমসের আলী। জানতে চাইলে তিনি জানান, অভিযোগটি তদন্তের জন্য বিএমডিএ’র মহাদেবপুর জোনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে মহাদেবপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক জানান, সরেজমিন তদন্ত করা হয়েছে। আর অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ইউএনও কামরুল হাসান সোহাগ।

এইচ/আর