শুক্রবার , ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ওপারে গোলাগুলি-বিস্ফোরণ থামছে না, সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ

Paris
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

মিয়ানমার সীমান্তে অব্যাহত গোলাগুলি আর বিস্ফোরণের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজও বন্ধ হয়ে গেছে। নির্মাণাধীণ সড়কটির নির্মাণসামগ্রী যেখানে যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়ই পড়ে রয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর)  মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া একটি গোলা এসে পড়েছে উখিয়া সীমান্তের নাফনদ তীরের আনজুমানপাড়া ওয়াকফ স্টেটের ধানক্ষেতে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন একজন কৃষক।

গতকালও সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি অংশের তুমব্রু ও ঘুমধুম এবং কক্সবাজারের উখিয়ার আনজুমানপাড়া পয়েন্টে মুহূর্মুহু গোলাগুলি এবং মর্টারশেলের শব্দে কেঁপেছে সীমান্ত এলাকা। অব্যাহত গোলাগুলি এবং মর্টারশেলের ভয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি জনপদের সীমান্ত এবং কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

সীমান্ত পরিস্থিতি এমনই অনিরাপদ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে যে, গতকাল দুপুরে ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়া বাজার সংলগ্ন বিজিবি ক্যাম্পেই এ প্রতিবেদকের সীমান্তমুখী গাড়িটি থামিয়ে দেওয়া হয়। কর্তব্যরত বিজিবির দুই সদস্যদের পরিচয় দিয়ে সীমান্তে যাবার প্রয়োজনের কথা জানালে তাদের একজন তাৎক্ষণিক ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সুবেদার শহিদুল্লাহর কাছে ওয়াকিটকির সাহায্যে অনুমতি চাইলেন। জবাবে ওয়াকিটকিতে (কথোপকথন সবাই শুনতে পাচ্ছিলেন) বিজিবির সুবেদার জানালেন, ‘ওখানে যাওয়া দরকার হলে আগে গাড়িটি বুলেটপ্রুফ করিয়ে নিতে বলেন। অন্যথায় ওনার দায়-দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। ’ এমন অবস্থায় গ্রাম পুলিশ আবদুর রহিমও জানালেন ওদিকে না যেতে।

বিজিবির বাধা পেয়ে যেতে হলো হাইওয়ে সড়ক দিয়ে ঘুমধুম বিজিবির অপর পয়েন্টে। সেখানে অবস্থানকারী ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পের কর্তব্যরত সদস্যরা দক্ষিণ দিকের ‘লাল ব্রিজ’ এলাকায় যেতে বাধা দিলেন। সদ্যনির্মিত এশিয়া হাইওয়ে সড়কের মিলনস্থলটি হচ্ছে সেই লাল ব্রিজের সাথে। এই লাল ব্রিজটিই হচ্ছে মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যকার যোগাযোগের সেতুবন্ধন। অথচ সেই সেতুটি এখন নিরব-নিথর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আশপাশের বাড়ি-ঘরের কোনো লোকজনেরও দেখা মিলছে না। যে যার মতো করেই সময় কাটাচ্ছে।

এসময় জনমানবশূন্য এশিয়া হাইওয়ে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক হোসেন আহমদ কাছে এসে বললেন, ‘দেখুন আমরা সীমান্তবাসীর জন্য কতো বড় একটি সম্পদ নির্মিত হচ্ছে- সেটি সীমান্ত সড়ক। কিন্তু বর্মাইয়াদের (মিয়ানমার) গোলাগুলি আর হাঁকডাকের কারণে সেই সড়কটির নির্মাণ কাজও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ’ তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে আগে দৈনিক ৬০০/৭০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন দৈনিক বড়জোর ২৫০/৩০০ টাকা মাত্র রোজগার হয়। লোকজন হাটে-বাজারে যাওয়া আসা করে না এখন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘এশিয়া হাইওয়ে সড়কের শেষ প্রান্ত (লাল ব্রিজ সংলগ্ন) থেকে সোজা নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে জেলা সদর বান্দরবানের সাথে সংযোগ হবার কথা সীমান্ত সড়কের। সেনাবাহিনী কাজও শুরু করেছিল বেশ জোরেশোরে। কিন্তু মিয়ানমার বাহিনী আমাদের সীমান্ত এলাকায় এসে ফুটাফুটি (গোলাগুলি) করায় নিরাপত্তাহীনতার মুখে সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ’ তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি শুরুর পরেও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে দেখে তারা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, জানান ইউপি মেম্বার আনোয়ারুল।

তিনি জানান, গতকালও তুমব্রু এবং ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে দফায় দফায় গোলাগুলি ও মর্টারশেলের শব্দ শোনা গেছে। এমনকি গত কয়েকদিনের চাইতেও গতকাল গোলাগুলির শব্দ সবচেয়ে বেশি শুনতে পাওয়া গেছে। এসব কারণে সীমান্ত এলাকায় বসাবাসকারী ২৩০টি পরিবারকে জরুরিভাবে নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এসব পরিবারগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০ পরিবার, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১০০ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১০০ পরিবার। তাদের স্থানীয় ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাখা হবে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বান্দরবান জেলা প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি, তাই তারা অপেক্ষা করছেন।

ওদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাড়িয়ে গত মঙ্গলবার থেকে মিয়ানমার বাহিনী কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তেও গোলাগুলি অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত পড়েছে ২৭১ কিলোমিটার এলাকা। তন্মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত এলাকা পড়েছে নাফনদ। আর বান্দরবান জেলার পুরোটাই পড়েছে পাহাড়ি এলাকা। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমান পাড়ার ফসলি জমি ও চিংড়িঘের রয়েছে নাফনদের তীরে। এলাকাটিতে নাফ নদের প্রস্থ একদম কম বিধায় ওপারের গোলাগুলির শব্দে এপারের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডটি হচ্ছে নাফনদের তীরবর্তী এলাকা। উক্ত ওয়ার্ডেও ইউপি মেম্বার (সদস্য) জাফরুল ইসলাম বাবুল গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার এলাকার কৃষক আবু ছিদ্দিক অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। কৃষক ছিদ্দিক নাফনদ তীরে আনজুমান পাড়া ওয়াকফ স্টেটের জমিতে ধানক্ষেতের আগাছা সাফ করার সময়েই আকস্মিক একটি গোলার অংশবিশেষ এসে পড়ে ধানক্ষেতে তার পাশে। একটুর জন্য বেঁচে গেছেন। ’

ইউপি মেম্বার জানান, গতকাল সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হয়েছে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী আনজুমান পাড়ার ধানক্ষেতে গুলি এসে পাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সীমান্ত এলাকাটির একজন প্রবীণ ব্যক্তি নুরুল হক হেডম্যান (৭৭)। গতকাল বেতবুনিয়া বাজারে তিনি চলমান পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ হাজার বাসিন্দা গত মাসাধিক কাল সময় ধরে ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ইউনিয়নটির উত্তরাংশের অর্ধেক মানুষ পাহাড়ের কাঠ-বাঁশ-লাকড়ি সংগ্রহ করে জীবর ধারণ করেন। আর দক্ষিণাংশের বাকি অর্ধেক মানুষ নির্ভরশীল নদীতে জাল বা বড়শি দিয়ে মাছ ধরার কাজে। কিন্তু এখন সবই বন্ধ হয়ে গেছে। আবার সীমান্তঘেঁষা ফসলি জমিতে যেসব মানুষ ক্ষেত-খামার করেছেন, তারা পড়েছেন আরো বড় সমস্যায়। কেননা কৃষকরা তাদের রোপন করা ক্ষেত-খামারের পরিচর্যা করতে পারছে না। ফলে জমির ফসল চোখের সামনেই পানি আর সারের অভাবে মরে যাচ্ছে।

সীমান্তের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে মাথা ঘামানো এই প্রবীণ মানুষটিই বলছিলেন, ‘শুনুন বর্মার মগদের (মিয়ানমারের রাখাইন) অত্যন্ত কাছে থেকে এই সীমান্তে দেখে আসছি দীর্ঘকাল ধরে। তাদের চেনার বাকি নেই। তারা কোনো ‘বাগি’ (বাগি বার্মিজ ভাষায় সন্ত্রাসী) তাড়াচ্ছে না। বাগি এ এলাকায় নেই। বাস্তবে তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বন্ধ করার জন্যই এসব মিথ্যা অজুহাতে সীমান্ত এলাকাটিকে উত্তপ্ত করতে চাইছে। ’

 

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়