এ কেমন সেরা বিদ্যাপীঠ চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের বিদ্যালয় অভ্যন্তরে উশৃঙ্খলতায় ১২৩ বছরের সুনাম ও গৌরব খোয়াতে চলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেরা বিদ্যাপীঠ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় ছুটির পর বিকেল বেলা বিদ্যালয়টি হয়ে উঠছে কিছু বহিরাগত ও অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ধূমপান ও মাদক সেবনের স্থান। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোণায় অবাধে চলে এসব কার্যক্রম। সাথে বিশাল খেলার মাঠ জুড়ে চলে তাসের আড্ডা ও বাজি খেলা।

দেশের সেরা সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অন্যতম এই উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদান, পর্যালোচনা ও শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননশীলতা হরিমোহনকে রেখেছে সরকারি বিদ্যালয়গুলোর মাঝে অনন্য তালিকায়। প্রতি বছর জুনিয়র ও মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরিক্ষার ফলাফলে হরিমোহনের স্থান থাকে দেশ সেরা স্কুলগুলোর তালিকায়।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক, প্রশাসন ও অভিভাবকদের অবহেলায় সেরা এই বিদ্যাপীঠ হয়ে উঠছে কলুষিত। বহিরাগতদের নিয়মিত আগমন, উৎশৃঙ্খল চলাফেরা, সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মানো কিছু ধনীর দুলালের বাইকের গর্জন, অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের অবাধে ধূমপান ও গাজা সেবন বিদ্যালয়ের পরিবেশকে করে তুলেছে নোংরা ও অসামাজিক। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ঠাঁই পেয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন গ্যাং-গ্রুপ। যারা বিদ্যালয় জুড়ে চালাচ্ছে দৌরাত্ম। নিজস্ব বিদ্যালয়ের পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী দেয়ালগুলোকেও নিজেদের কুকর্মের কালোহাত থেকে রেহাই দেইনি এসব নামধারী ছাত্ররা।

মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে ঢুকতেই বিভিন্ন দেয়ালজুড়ে চোখে পড়ে বিচিত্র লেখা ও অংকন করা কিছু অশ্লীল শব্দ ও চিত্র। এত কিছুর পরও কেনো মাথাব্যাথা নেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

এবিষয়ে সিল্কসিটিনিউজের টিম কথা বলে প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলামের সাথে। তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এই বিদ্যালয়ে আগমন মাত্র কয়েকদিনের। এইরকম অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ আজ পর্যন্ত দেইনি। তবে উড়োভাবে হলেও এর কিছু আভাস আমি পূর্বেই পেয়েছি। আর বিশেষত সেজন্যই থানার কয়েকজন সাব ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলেছি, তারা এই বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিবেন বলেও আমি আশা রাখছি।’

সেরা এই বিদ্যালয় চান্স পাওয়ার জন্য প্রতি বছর ৬ষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে হাড্ডাহাডি ভর্তি পরিক্ষা যুদ্ধে নামে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিক্ষার্থীরা। দুই ঈদ ও বিভিন্ন দীর্ঘ সরকারি ছুটিতে এই বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকুরিজীবনে পা রাখা অনেক সাবেক শিক্ষার্থীর মিলনস্থল হয়ে উঠে এই হরিমোহন। এসময় বিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর খেলাধূলায় মেতে ওঠে হরিমোহন প্রাঙ্গন। কিন্তু বর্তমান শিক্ষার্থীদের এমন উচ্ছন্নে যাবার জন্য অভিভাবকদের দায়ী করেছেন অনেকে। অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি অবহেলা ও কঠোর শাস্তির ভয় না থাকার কারণেও ছাত্ররা এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান তারা। এছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও দায়ী করছেন তারা।

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, তার বিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র এসব কাজের সাথে জড়িত থাকলে অবশ্যই তিনি কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। এক্ষেত্রে একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের মান অক্ষুন্ন রাখতে যেকোনো বৈধ পদক্ষেপ নিতেও পিছ পা হবেন না বলেও জানান তিনি।

ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও দেশ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে শিক্ষার্থীরা সামাজিকতার আদলে নিজেদের গড়ে তুলবে এমনটাই প্রত্যাশা সুধীমহলের।

স/শা