এ কেমন জীবন গল্প!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার নারায়ণী দাসের জীবনের কাহিনি যেন কোনো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দেয়। স্বামী ও তিন মেয়ে নিয়ে চমৎকার একটা সংসার ছিল নারায়ণীর। আর্থিক সচ্ছলতা ছিল, কখনো খাওয়া-পরা নিয়ে ভাবতে হয়নি। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর স্বজনদের প্রচারণায় সেই নারায়ণীই এখন চলেন মানুষের দয়ায়।

কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন নারায়ণী দাস। স্বামী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ভরা সংসার। সম্পত্তি, জমিজমা ছিল। বেশ চলছিল সবকিছু। মেয়েরা বড় হয়। দেখেশুনে দুই মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়েদের বিয়ের পর হঠাৎ একদিন মারা যান নারায়ণীর স্বামী। এতে বিপাকে পড়েন তিনি। তবে সহায়-সম্পত্তি থাকায় তা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছিলেন।

একসময় ছোট মেয়ের বিয়ে দেন বিহারের পাটনায়। বিয়ের পর ছোট মেয়ে আর তাঁর স্বামী নারায়ণীকে আদর করে নিয়ে যান পাটনায়। সেখানে আজীবন থাকার জন্য প্রস্তাব দেন। নারায়ণীও ভাবেন, একা থাকার চেয়ে ছোট মেয়ের কাছে থাকায় ভালো হবে।

মেয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেন তিনি। মেয়ে ও মেয়ের জামাই যত্নআত্তি করছিলেন অন্য এক উদ্দেশ্য নিয়ে। নারায়ণীকে ভুলিয়ে–ভালিয়ে মাথাভাঙ্গায় তাঁর সব সম্পত্তি বিক্রি করে সেই অর্থ নিয়ে নেন তাঁরা। সবকিছু নেওয়ার পর ভালো মানুষের মুখোশ খুলতে শুরু করে ছোট জামাইয়ের। শুরু করেন বৃদ্ধা নারায়ণীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। খেতে দিতেন না। বাধ্য হয়ে পেট চালানোর জন্য পরের বাড়িতে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে মেয়ে ও জামাই আত্মীয়দের মাঝে ছড়িয়ে দেন নারায়ণী মারা গেছেন। বড় ও মেজ মেয়ে এই সংবাদ পেয়ে মায়ের শ্রাদ্ধও করেন। মাথাভাঙ্গার মানুষও খবর পান নারায়ণী মারা গেছেন। অথচ নারায়ণী এসবের কিছুই জানতেন না।

একদিন নারায়ণী ছোট মেয়েকে অনুরোধ করেন মাথাভাঙ্গার শনিমন্দির মোড়ে মেজ মেয়ের বাসায় দিয়ে আসার জন্য। কিন্তু শিলিগুড়িগামী একটি বাসে তাঁকে তুলে দেন মেয়ের জামাই। শিলিগুড়িতে নামার পর কোথায় যাবেন নারায়ণী? তাঁর কাছে টাকাপয়সাও নেই, পথঘাটও চেনেন না। অগত্যা লোকজনকে জিজ্ঞেস করে বাসে উঠে মাথাভাঙ্গায় চলে আসেন তিনি। মাথাভাঙ্গার শনিমন্দির মোড়ে মেজ মেয়েও তাঁকে গ্রহণ করেন না। অগত্যা ফিরে এসে নারায়ণী ঠাঁই নেন নদীর চরে। তাঁকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে স্থানীয় লোকজন।

শুটুঙ্গা নদীর চরে একটি ঝুপড়ি বানিয়ে আশ্রয় দেওয়া হয় নারায়ণীকে। সেখানেই পৌরসভা থেকে তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর থেকে ওই ঝুপড়িতেই বাস করছেন নারায়ণী। বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে। খোঁজ নেননি কোনো মেয়েই। সত্তর বছরের বৃদ্ধার দিন কাটে মৃত্যুর প্রহর গুনে।