সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
নদীমাতৃক বাংলাদেশের চিরায়ত নদীর চিত্র দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে।
নদী অববাহিকায় গড়ে ওঠা শহর-বন্দর-গ্রামের দূষিত বর্জ্য নদীর পানিকে দূষিত করছে। এতে নদীর নাব্যতা নষ্ট করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত বাঁধ তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করার ফলে দিনে দিনে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে নদী।
নদী ও পানিসম্পদ রক্ষায় সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের আরো উদ্যোগী করা, মানুষকে সচেতন করা এবং নদী ও পানিসম্পদ রক্ষার আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করতে এশিয়ায় প্রথমবারের মত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পানি জাদুঘর।
নাব্যতার কারণে হারিয়েছে আমাদের গর্বের অনেক নদী। হারিয়ে গেছে নদীকেন্দ্রিক মাছ, গাছ ও ফসল। মানুষের নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা দিনদিন ব্যহত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর উন্নয়নের জন্য। কৃষিনির্ভর এই দেশে নদী হল আশির্বাদ। অথচ সেই নদী ও নদীর পানিকে রক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা এলাকার এবং কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে একটি দ্বিতল ভবনে পানি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস-এর সহযোগিতায় কলাপাড়া উপকূলীয় জনকল্যাণ সমিতি পরিচালনা করছে এই জাদুঘরটি।
২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও আভাসের উদ্যোগে কলাপাড়া উপজেলার পাখমারা এলাকার কুয়কাটা-ঢাকা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বিশ্বের অষ্টম ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘরটির উদ্বোধন করা হয়।
পানি জাদুঘরে প্রবেশ পথের সম্মুখেই রয়েছে নদীতে বাঁধ তৈরির ফলে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় মানুষের জীবন যাত্রার পরিবর্তনের দৃশ্য। বাঁধ তৈরির ফলে শুকিয়ে গেছে নদী। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য নৌকা শুকিয়ে যাওয়া নদীতে পড়ে আছে। অর্ধ বালুতে ডুবন্ত নৌকার বুকে বিধে আছে দুটি গজাল লোহা। এর মাধ্যমে নদী ও নদীমাতৃক বাংলাদেশকে খুনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
এই জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের ৭০০টি নদীর ইতিহাস, বিভিন্ন নদীর পানি, নদীর ছবি, নদীর পানির ইতিহাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশে ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার চিত্রসহ বিভিন্ন তথ্য। রয়েছে গ্রামবাংলার মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ, নদী নিয়ে গান ও পল্লী শিল্প। রয়েছে কাঁসা ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র। বাংলাদেশের সঙ্গে ৫৭টি আর্ন্তজাতিক অভিন্ন নদীর ইতহাস রয়েছে এখানে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃত নদীর চিত্র ও তথ্য খুঁজে পেতে জ্ঞান পিপাসু মানুষের ভীড় থাকে প্রতিদিন এখানে। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের প্রধান অকর্ষণ এই পানি জাদুঘর। কুয়াকাটার যাত্রাপথে গাড়ি থামিয়ে দেখে যায় পানি জাদুঘর।
সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দর্শনার্থী ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০টাকা।
পরিবারের সবার সঙ্গে পানি জাদুঘর দর্শনে আসা বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থী পায়েল বিশ্বাস বলেন, নদীকেন্দ্রিক বাংলাদেশের এই চিত্র আমার অজানা থেকে যেত, যদি এখানে না আসতাম। নদী, নদীর নাব্যতা রক্ষায় আজ থেকেই আমাদের সোচ্চার হতে হবে-এখান থেকে সে অনুপ্রেরণা নিয়ে গেলাম। বাঁচাতে হবে নদী, বাঁচাতে হবে কৃষি। তবে বাঁচবে আমাদের শষ্য-শ্যামল-সুফলা বাংলাদেশ। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও আভাসকে ধন্যবাদ এ রকম একটি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।
সূত্র: রাইজিংবিডি