এশিয়ার তিন দেশের সঙ্গেই সীমান্ত বিতর্কে চীন

ভুটানের সঙ্গে নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছে চীন। দেশটি সীমান্তে ভুটানের বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যের দিকে নজর দিয়েছে। চীন দাবি করেছে, ভুটানের পূর্ব প্রান্তে সাকতেং অভয়ারণ্য তাদের ভূখণ্ডেরই অংশ। এই দাবির পরই চীনের বিরুদ্ধে ‘ডিমার্চে’ পাঠিয়েছে ভুটান।

‘ডিমার্চে’ হলো একটি কূটনৈতিক প্রতিবাদ, যা কোনো একটি ইস্যুতে একটি দেশের অবস্থান পরিষ্কার করে। এমনই তথ্য জানা গেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে। ভুটানে চীনের দূতাবাস নেই। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চীনের দূতাবাসের মাধ্যমেই ভুটান চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। চীনের দাবি কোনোভাবেই মানছে না ভুটান। চীনও জানিয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্কে স্থায়ী সমাধান চায় চীন।

জুনে অনুষ্ঠিত ৫৮তম গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটির (জিইএফ) বৈঠকে চীনারা সাকতেং অভয়ারণ্য নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বন্য জীবন অভয়ারণ্য প্রকল্পটি চীন ও ভুটানের সীমান্ত এলাকার বিতর্কিত স্থানে অবস্থিত। ভুটানের পূর্ব প্রান্তে সাকতেং অভয়ারণ্য তাদের ভূখণ্ডেরই অংশ। ভারত এর প্রতিবাদ করলেও বৈঠকের বিবরণীতে চীনের তোলা বিতর্ক স্থান পায়।

সাকতেং অভয়ারণ্য ভুটানের এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত, যা ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও চীন সীমান্তবেষ্টিত। ওই সম্মেলনে চীনের এমন দাবিতে সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানায় এশিয়ার অন্যতম ক্ষুদ্রতম দেশ ভুটান।

চীনা দাবি লাদাখ, দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগরের অন্যান্য অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পিপলস লিবারেশন আর্মির লড়াইয়ের সঙ্গে মিল রয়েছে। তবে সাকতেং অভয়ারণ্য নিয়ে চীনের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাকতেং ভুটানের ভূখণ্ডের মধ্যেই অবস্থিত। তবে চীনের জোরাজুরিতে বিষয়টি নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে সাকতেং অভয়ারণ্য নিয়ে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটিতে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় ভুটান। চিঠিতে দৃঢ়ভাবে চীনের দাবির প্রতি বিরোধিতা করা হয়। সেই সঙ্গে সার্বভৌমত্বের বিষয়টি নিয়েও চিঠিতে লেখা হয়।

থিম্পু পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, সাকতেং অভয়ারণ্য ভুটানের সার্বভৌম অঞ্চল। এটি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। জিইএফ কাউন্সিলের নথি থেকে চীনের ভিত্তিহীন দাবি মুছে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে ভুটান।

ভারতের পর ভুটানের সঙ্গে চীনের সীমান্ত বিতর্ক নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতকে চাপে ফেলতেই নতুন এই কৌশল অবলম্বন করছে চীন। এর আগে নেপালের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিতর্কেও তাদের হাত রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য।

এদিকে গত মে মাসের শেষ পর্ব থেকে লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিতর্ক নতুন চেহারা পায়। ভারত অভিযোগ করে, চীন তাদের সীমান্তের ভেতর ঢুকে এসেছে এবং স্থায়ী কাঠামো তৈরি করছে। গালওয়ান, প্যাংগং এবং ডেপসং অঞ্চলে বিতর্কিত এলাকায় মৃদু সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে ১৫ জুন রাতে গালওয়ান অঞ্চলে সংঘর্ষ তীব্র আকার নেয়। ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। তার পর থেকে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।

সম্প্রতি নেপাল ভারত-নেপাল সীমান্তের কয়েকটি জায়গা নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নিয়ে সংসদে নতুন বিল পাস করে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, চীনের সমর্থনেই এ কাজ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি। যা নিয়ে দেশের ভেতরেই বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় ওলি সরকারকে। এরপর আবার চীনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে নেপাল সরকারও। মে মাসে চীনের সরকারি টিভি চ্যানেল গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টুইটারে পুরো মাউন্ট এভারেস্টকে ‘চীনের অংশ’ বলে চিহ্নিত করেছিল। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধায় টুইটটি মুছে দেওয়া হয়।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ