এমপি লিটন হত্যাকাণ্ড: থমথমে পরিবেশ এলাকায়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর এমপি লিটনের গ্রাম সাহাবাজ (মাস্টারপাড়া), সর্বানন্দ, বামনডাঙ্গাসহ গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নেমে এসেছে শোক ও আতঙ্কের ছায়া। নিজ বাড়িতে লিটনকে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের দাবি, দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর করা হোক।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং যে কোনও ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এমপি লিটনের বাড়িসহ বামনডাঙ্গা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এসব যায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কের মোড়ে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামে লিটনকে তার বাড়িতে ঢুকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৭টার দিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আজ রবিবার (১ জানুয়ারি) ময়না তদন্তের পর তার লাশ স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়ার  কথা রয়েছে।.

এমপি লিটনের স্বজনদের আহাজারি

এদিকে রবিবার সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমপি লিটনের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশ ও দূর-দূরান্তের লোকজন ছুটে আসেন। এমপি লিটনের মরদেহ একনজর দেখেতে বাড়িতে ভিড় জমতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে চলছে আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশির আহাজারি। লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকার লোকজন হামলাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছে। শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত তারা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে। এছাড়া নলডাঙ্গা-বামনডাঙ্গা সড়কের বিভিন্ন এলাকায় গাছ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে অবরোধও সৃষ্টি করে তারা।

ঘটনার পর পরই বন্ধ হয়ে যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরসহ বামনডাঙ্গা বাজার ও আশপাশের এলাকার সব ধরনের দোকানপাট। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী কলেজ রোডে অবস্থিত এক জামায়াত কর্মীর ওষুধের দোকানসহ বাড়িতে আগুন দেয়।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। হত্যাকারীদের শনাক্তে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান চালাচ্ছে।

ওসি আরও জানান, রংপুর পুলিশ রেঞ্জের বিভাগীয় কমিশনার (ডিইআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক, রংপুর পুলিশ রেঞ্জের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার বশির আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আশরাফুল আলম (বিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল্লাহ আল ফারুক ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল আলমসহ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।.

গাইবান্ধার এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার ও বাড়িতে থাকা এমপি লিটনের কর্মচারী জুয়েল মিয়া জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। শনিবার বিকালে এমপি লিটন তার বৈঠকখানার ঘরে টেলিভিশন দেখছিলেন। হঠাৎ করে মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক এমপি লিটনের বাড়িতে আসে। ওই যুবকরা হেলমেট পড়া ছিলো। একজন মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুজন বরান্দায় এসে এমপি লিটনের অবস্থান জানতে চান। পরে তিনি ঘরে আছে বুঝতে পেয়ে দুই যুবক ঘরের দরজা খুলেই এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এরপর তারা দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।

এমপি লিটনের লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিম ঘরে রাখা হয়েছে। রবিবার সকাল ৯টার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। এরপর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লাশ তার গ্রামের বাড়ি সাহাবাজা গ্রামে (মাস্টারপাড়ায়) কখন পৌঁছাবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি এমপি লিটনের স্বজনরা।

জানাজা ও কোথায় দাফন হবে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পাওয়ার পর রবিবার সেই সিন্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এমপি লিটনের অপর শ্যালক সৈয়দ বদিউল কারেমীন বাদল।

সূত্র : বাংলাডিট্রবিউন