চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকা আত্মসাত: এমপির ফারুকের কথিত ভাতিজা পাপ্পুর বাড়ি ঘেরাও


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী-১ আসনের (তানোর-গোদাগাড়ী) এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে সরকারী চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে থিম ওমর প্লাজার কর্মচারি নাহিদুজ্জামান পাপ্পুর বাসা ঘেরাও করেছে ভুক্তভোগিরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পাপ্পুর প্রতারণার শিকার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন যুবক রাজশাহী নগরীর বিসিক এলাকার ম্যাচ ফ্যাক্টারির সামনে পাপ্পুর ভাড়া বাসা ঘেরা করে রাখে।

সন্ধ্যার দিকে বিষয়টি বোয়ালিয়া থানা পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ভুক্তভোগিরা তার বাড়ি ঘেরাও করে রেখে ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

ঘেরাও করে রাখা ব্যক্তিরা জানান, পাপ্পু নিজেকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুীর ভাতিজা পরিচয় দিতেন। তিনি এমপি ফারুক চৌধুরীকে দিয়ে চাকরি নিয়ে দেবেন এমন আশ্বাসও দেন। চাকরি পাওয়ার আশায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক তাকে মোটা অংকের টাকা দেয়। টাকা দিলেও কারোই কপালে জোটেনি চাকরি। বরং পাপ্পুর কাছে টাকা ফেতর চাইলে উল্টা হুমকি-ধামকি দেয়া খেতে হয় ভুক্তভোগিদের। চাপে পড়ে অনেক সময় টাকা ফেরত দেয়া হবে বলেও আশ্বাসস দেয় পাপ্পু। কিন্তু বছর পার হলেও পাপ্পু কাউকেই টাকা ফেরত দেয়নি।

এছাড়াও অনেকেই পাপ্পু চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছেন। ভুয়া ওই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিরস্থলে যোগদান করতে গিয়ে ভুক্তভোগিরা জানতে পারেন, তাদের যে নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে সেটি ভূয়া। এতে তারা হয়রানির শিকার হন।

পাপ্পুর প্রতারণার শিকার আলমগীর হোসেন জানান, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে পাপ্পু নিজেকে তাকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে। এতে আলমগীরের কাছ থেকে তিনি ২ লাখ টাকা নেয়। আলমগীরের সাথে আরো ৮জনের কাছ থেকে দুইলাখ করে টাকা নেয় পাপ্পু। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও চাকরি দিতে পারেনি পাপ্পু। তিনি টাকা ফেরত চাইলেও পাপ্পু গড়িমশি শুরু করেন। এক পর্যায়ে আলমগীরের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন।

রেলে চাকরি দেয়ার নামে ১১ লাখ টাকা হারিয়ে নেয় ইমন নামে এক যুবকের কাছ থেকে। তাকে গত বছর রেলে চাকরি দেয়ার কথা ছিল। ইমনসহ ১০জনকে চাকরিও দিয়েছেন পাপ্পু। কিন্তু ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে। ইমনসহ ওই ১০জন যুবক নিয়োগ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম রেলের দপ্তরে যান যোগদান করতে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তাদেরকে দেয়া হয়েছে ভূয়া নিয়োগপত্র। পরে তারা ফিরে এসে পাপ্পুকে বিষয়টি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারা টাকা ফেরত চাইলে গড়িমশি শুরু করেন পাপ্পু। এক পর্যায়ে টাকা ফেরত দিবে বলে দিন নেন। কিন্তু সময় গড়ালেও তিনি আর টাকা ফেরত দেননি।

ফায়সাল নামে এক যুবকের কাছ থেকে পাপ্পুকে পুলিশের এসআই পদে চাকরি নিয়ে দেয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন ১৬ লাখ টাকা। এই টাকা নিয়েছেন খোদ এমপি ফারুক চৌধুরীর নামে। এমপি ফারুক চৌধুরী তাকে চাকরি নিয়ে দিবে বলে তার কাছ থেকে এ টাকা নেয়া হয়। যদিও ফয়সালের সাথে চুক্তি হয় ২০ লাখ টাকা। কিন্তু বছর গড়ালেও ফয়সাল পুলিশের চাকরি পায়নি। বারবার পাপ্পুর কাছে গেলে তিনি এমপির ভয় দেখান। হুমকি ধামকি দেন। কখনো ফয়সালকে জানানো হয় এমপি টাকা নিয়েছেন তার কাছে গিয়ে টাকা ফেরত নেন।

এমন আরো ২৫ থেকে ৩০জন যুবকের কাছ থেকে পাপ্পু সরকারী চাকরি দেয়ার নামে টাকা হারিয়ে নিয়েছেন। এখন টাকা চাইলে কাউকে ভয়ভীতি কাউকে হুমকি আবার কাউকে টাকা ফেরত দেয়া হবে বলেও তিনি ঘুরাচ্ছেন। এরই জের ধরে মঙ্গলবার বিকেলে এসব ভুক্তভোগিরা পাপ্পুর বাড়ি ঘেরাও করে।

এব্যাপাওে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নগরীর বোয়ালিয়া থানার এসআই সোহেল রানা জানান, ঘটনা স্থলে আছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দুপক্ষের সাথেই কথা চলছে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো।