এবার হাতীবান্ধায় আরেক ‘পরিমল’, একাধিক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, ফেসবুকে অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক মো. মেহেদি হাসান সুমনের (৩৫) একাধিক অন্তরঙ্গ ছবি (স্ন্যাপশট) ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

গত শনিবার রাতে পত্রিকায় প্রকাশ অযোগ্য ছবি ফেসবুকে আপলোডের পর থেকে চলছে সমালোচনা। সেখানে বিচারের দাবির পাশাপাশি কেউ ‘লম্পট’, কেউ ‘চরিত্রহীন’, কেউবা ‘গুণ্ডা’ হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষককে।

স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমিও একজন শিক্ষক। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলে, এমন কাজ কোনো শিক্ষকের দ্বারা হতে পারে না। সে মানসিক বিকারগ্রস্ত। উপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে তাঁকে বিচারের আওতায় আনা হোক। ’

মেহেদি হাসান সুমনের একটি ছবি দিয়ে একজন টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘শিক্ষক সমাজের এই কুলাঙ্গার নাকি হাতীবান্ধার পরিমল জয়ধর। ’ ওই ছবির নিচে অনেক মন্তব্যের একটি হচ্ছে, ‘এটা তো সুমন, কাজির বাজার, হাতীবান্ধা।

উপযুক্ত শাস্তি চাই। ’প্রকাশ অযোগ্য কয়েকটি ছবি আপলোড করে একজন লিখেছেন, ‘হাতীবান্ধায় ধর্ষকের ছবি ফাঁস। এর বিচার চাই। সুমনের বিচার চাই। ’

অধ্যক্ষ বরাবর করা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতির আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘মেহেদি হাসান দুশ্চরিত্র ও লম্পট শিক্ষক। তাঁকে নিয়ে কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে হাতীবান্ধার পরিমল জয়ধর হিসেবে সমালোচনার ঝড় বইছে। ওই শিক্ষকের অশ্লীল ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ’ আরো কিছু ঘটনার উল্লেখ করে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কারসহ তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে উপজেলা ছাত্রলীগ এ বিষয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এই আবেদনের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং থানার ওসিকে।

এদিকে গতকাল বিকেলে প্রায় একই ধরনের দাবি জানিয়ে অধ্যক্ষের কাছে উপজেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আরেকটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে হাতীবান্ধার মেডিক্যাল মোড় থেকে নেমে কলেজের দিকে একটি সরু গলির মুখে দরজার ওপরে ঝুলছে একটি সাইনবোর্ড। গলির এক পাশে রেস্টুরেন্ট, অন্য পাশে স্টুডিও। গলির দরজা পেরিয়ে কিছুটা ভেতরে গিয়ে আরো একটি দরজা দিয়ে ঢুকে ক্লাসরুমের মতো একটি কক্ষ। এই কক্ষে প্রাইভেট পড়াতেন সুমন। যেখানে রয়েছে বেশ কিছু বেঞ্চ, এক পাশে একটি টেবিল। রয়েছে বেশ কিছু বইপত্র। সেই কক্ষের পেছনে ঝোপঝাড়। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া আপত্তিকর ছবির সঙ্গে কক্ষটির মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে আশপাশের লোকজন।

আশপাশের লোকজন জানায়, কক্ষটি ভাড়া নিয়ে অনেক দিন ধরে প্রাইভেট পড়াতেন সুমন। যার বেশির ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে ১৭ আগস্ট প্রথম ফেসবুকে বিষয়টি উঠে আসার পর থেকে সেখানে আর আসেননি সুমন। আর গত ৩০ আগস্ট সেটি তালাবদ্ধ করে দেন ঘরের মালিক। মাসখানেক আগে থেকে সুমন কলেজে আসছেন না। বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। গতকাল রবিবার বিকেলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে গত শনিবার দুপুরে একজন সাংবাদিকের কাছে সুমন দাবি করেন, ‘আমি এসবের কিছুই জানি না। যারা ফেসবুকে এসব রটাচ্ছে, তারা পারিবারিক শত্রুতার জন্য এমনটি করতে পারে। ’

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মশিউর রহমান মামুন বলেন, ‘একদিকে আমি কলেজটির সাবেক ছাত্র, অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে শিক্ষকের চারিত্রিক স্খলনজনিত ঘটনা কোনোভাবে মেনে নিতে পারিনি। আমার মতো অনেকের একই মত। তাই ওই শিক্ষকের বিচার চেয়ে আবেদন করেছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের জিম্মি করে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। ’

কলেজটির অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে আমিও সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শুনছি। গতকাল রবিবার লিখিত অভিযোগ পেয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

হাতীবান্ধার ইউএনও সৈয়দ এনামুল কবির বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব। ’

সূত্র: কালের কণ্ঠ