মঙ্গলবার , ১৯ মার্চ ২০১৯ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীর মমতা নার্সিং ইন্সটিটিউট: মালিকানায় নেই বলে দাবি করলেন সেই এসপি

Paris
মার্চ ১৯, ২০১৯ ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর মমতা নার্সিং ইন্সটিটিউট দখল করলেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এবার নিজের মালিকানা নেই বলেই দাবি করলেন সেই পুলিশ সুপার (এসপি)। নিজের ক্ষমতার জোরে ওই প্রতিষ্ঠানটি দখলের পর গতকাল এ দাবি করেন তিনি। অথচ প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করে টাকা গ্রহণের স্বীকারোক্তিপত্রেসহ বিভিন্ন দলিলপত্রে চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর স্বাক্ষর দেখা গেছে। এমনকি সাইনবোর্ডে নিজের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটিও তিনি দিয়েছেন। এমনকি চেয়ারম্যান হিসেবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে বিধি লঙ্ঘন করে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলকারী ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) দায়িত্বরত পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী।

কিন্তু গতকাল তিনি দাবি করেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকাকালিন আমি কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানা গ্রহণের এখতিয়ার রাখি না।’

তবে গতকাল কাছে কিছু ছবি এবং মমতা নাসিং ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের নিকট আদায়কৃত টাকা গ্রহণের তাগজেও চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর স্বাক্ষর দেখা গেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির রেজুলেশনেও চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অুনষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন এই ধরনের ছবিও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি সাইনবোর্ডে তিনি নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ঝুলিয়েছেন। এদিকে একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিষ্ঠানটির ভিতরেই তিনি রাজশাহীর এক শিক্ষানুরাগীরও তোপেরমুখে পড়েছিলেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ থেকে শুরু করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবেই রয়েছেন পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম। কিন্তু তিনি একাই প্রতিষ্ঠানটি দখলে রেখেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

রাজশাহীর একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান হিসেবে থাকতে পারেন না। কিন্তু আব্দুর রহিম সেটিই করেছেন। এছাড়াও তিনি নিজেই পুরো মালিকানা দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।

এদিকে একটি কল রেকর্ডেও তিনি মালিকানা দখলের জন্য যে সমস্ত কথাবার্তা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটিন অন্য মালিকদের সঙ্গে, সেটিও সিল্কসিটি নিউজের হাতে এসে পৌঁছেছে।

মমতা নার্সিং ইন্সনিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী-ফাইল ফটো

প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালক মনিরুজ্জামান জানান, সম্মানীক চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীকে ৩৩ ভাগ শেয়ার দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আরো বেশি দাবি করেছিলেন। তাতেও রাজি ছিলাম। তার পরেও তিনি পুরো প্রতিষ্ঠানটিই এখন দখলে রেখেছেন। আমরা প্রতিষ্ঠানে গেলেই স্থানীয় মাস্তানদের দিয়ে তিনি নানাভাবে হয়লানি করার চেষ্টা করছেন। নিজেদের সম্মানের কথা বিবেচনা করে আমরা প্রতিষ্ঠানটিতে যেতে পারছি না। তবে তিনি যেহেতু মালিক নন, তাহলে আমাদের এখন প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম করতে তিনি বাধা দিচ্ছেন কেন? তিনি তাঁর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে কিভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির লিফলেট প্রচার করলেন এবং তিনি কিভাবে সাইনবোর্ডে নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করলেন।?

প্রতিষ্ঠানটির কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শবনম মোস্তারি মমি বলেন, মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটে আমরা পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীকে অবৈতনিক ও সম্মানী চেয়ারম্যান হিসেবে রেখেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের সরিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানটি দখলে রেখেছেন। এটি সবাই জানে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তিনি বিপাকে পড়ে এখন নিজেকে বাঁচাতে পুনরায় ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আমাদের নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছেন একের পর। আমরা এই হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।’

এদিকে গতকাল বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্টার সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘ মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটের মালিকানা নিয়ে আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর সঙ্গে অন্যদের ঝামেলার বিষয়টি আমরাও জেনেছি। কিন্তু এ নিয়ে কারো পক্ষে অবস্থান করার যৌক্তিকতা আমাদের নেই। প্রতিষ্ঠানটির নানা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বড় ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এখনো প্রতিষ্ঠাটির কার্যক্রমগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’

প্রসঙ্গত, মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার জন্য সমস্ত টাকা পয়সা বিনিয়োগ করেন মনিরুজ্জামান ও শবনম মোস্তারি মমিসহ আরো কয়েকজন মালিক। ওইসময় পরিচয় সূত্রে বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীকে অবৈতনিক ও সম্মানিক চেয়ারম্যান হিসাবে প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলে একাডেমিক অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে তিন ব্যাচে মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কিন্তু সম্প্রতি পুরো প্রতিষ্ঠানটি দখল করেন আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী। এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ হয়।

এদিকে ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) দায়িত্বরত পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী দাবি করেন, তার মালিকানাধীন জার্মিনেট প্লাজায় ভাড়ায় চুক্তিতে মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউট স্থান্তরের বিষয়টি সঠিক নয়। এই ধরনের কোনো চুক্তিপত্র কেউ দেখাতে পারবে না। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানা গ্রহণের এখতিয়ার তিনি রাখেন না।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর