‘এবার নাকি সিল হবে না, টিপ হবে’

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি :
‘শুনেছি এখানে মেশিনে ভোট হবে। আগে তো সিল মারতাম। এবার নাকি সিল হবে না, টিপ হবে। কীভাবে টিপ হবে সেটা তো জানি না।’ সান্তাহার পৌর শহরের তারাপুর মহল্লার ভোটার আমেজ উদ্দীনের কাছে ইভিএম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় ধাপের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ জানুয়ারী প্রথমবারের মতো দেশের বিভিন্ন জেলার পৌরসভার সঙ্গে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌরসভা নির্বাচনেও ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোট দেবেন ভোটাররা। তবে যে যন্ত্রের মাধ্যমে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা নেই অনেক ভোটারের। কারন এর আগে উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের কোনও নির্বাচনেই ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি। তাই ভোট দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেক ভোটাররা।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালে গঠিত প্রথম শ্রেণির সান্তাহার পৌরসভার মোট ভোটারের সংখ্যা ২৫ হাজার ৬৬৯ জন। পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৫৪৮ জন ও নারী ভোটার ১৩ হাজার ১২১ জন। এবাররের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ৩ জন, পুরুষ কাউন্সিলর ২৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন রয়েছেন। মোট ভোটকেন্দ্র ১২টি।

সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনি মাঠে চলছে প্রার্থীদের শেষ মুর্হূতের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। কিন্তু এসবের মধ্যেও এবছর যে প্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সেই ইভিএম সম্পর্কে অবগত নন সাধারণ ভোটাররা। গত কয়েক দিনে অন্তত ৫০জন শ্রমজীবী ভোটারের কাছে ইভিএম সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা এবিষয়ে কিছু জানেন না বলে মত ব্যক্ত করেন।

পৌর শহরের তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা গোল্ডেন ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর কাগজে টিপ-ছাপ দিয়ে ভোট দেই। কিন্তু এ বছর মেশিনে ভোট হবে শুনেছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এখনো সিস্টেমটা বুঝতে পারি নাই। এবিষয়ে নির্বাচনের আরো আগ থেকেই যদি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ক্যাম্পেইন করে ভোটারদের হাতে কলমে দেখানো হতো তাহলে আরও বেশি সহজ হতো।’ লকু পশ্চিম কলোনীর বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘যারা শিক্ষিত তাদের জন্য ইভিএম পদ্মতিতে ভোট দেওয়া অনেক সহজ হবে। কিন্তু যারা কম শিক্ষিত কিংবা শিক্ষিত নন, তারা একটু বিপাকে পড়বেন। নির্বাচনের কমিশনের আগে থেকেই এবিষয়ে ভোটারদের ধারণা দিতে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা উচিত ছিল।’ এদিকে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে পৃথক লিফলেট বিতরণ করে ইভিএমে ভোট প্রদানের পদ্ধতি বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন থেকেও ক্যাম্পেইন করে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ বিষয় কর্মকর্তাদের তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আদমদীঘি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুর রশিদ জানান, সান্তাহার পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রে মক ভোটের মাধ্যমে ইভিএম পদ্ধতিতে সরাসরি ভোট দিয়ে ভোটারদের হাতে কলমে শেখানো হয়েছে। এরপর ভোটারদের মধ্যে ইভিএম পদ্মতিতে ভোট দেওয়া নিয়ে কোন শঙ্কা থাকার কথা নয়।’

তিনি আরো জানান, ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট ও ব্যালট ইউনিট নামের দুটি অংশ থাকে। কন্ট্রোল ইউনিট থাকবে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সামনে। ব্যালট ইউনিট থাকবে ভোট দেওয়ার জন্য নির্ধারিত গোপন কক্ষে। কন্ট্রোল ইউনিটের কাজ ভোটার শনাক্ত করা। আঙুলের ছাপ, স্মার্ট কার্ড, আইডি নম্বর ও ভোটার নম্বরের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা সম্ভব। ভোটকেন্দ্রে আসার পর ভোটার সনাক্ত হওয়ার পর তার আঙুলের ছাপ কন্ট্রোল ইউনিটে দেবেন। এরপর ভোটারের ছবিসহ অন্যান্য তথ্য কন্ট্রোল ইউনিট এবং ভোট কক্ষে রাখা মনিটরে দেখা যাবে। সব ঠিক থাকলে ওই ভোটার ভোট দিতে পারবেন।

স/রি